গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশু নিহতের আশঙ্কা জাতিসংঘের

শিশুকে কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন গাজাবাসী
বিদেশে এখন
0

গাজায় বিপুল পরিমাণ সহায়তা পৌঁছাতে না পারলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তাই ত্রাণের পরিমাণ ব্যাপক হারে বাড়ানোর আহ্বান সংস্থাটির। এছাড়া গত চার দিনে গাজায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ইসরাইলি অভিযানে গাজায় আজ (মঙ্গলবার, ২০ মে) মধ্যরাত থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোতে একযোগে স্থল ও বিমান হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ। আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করেই গাজায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিকে দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর উপত্যকাটিতে সীমিত পরিসরে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

স্থল ও আকাশ পথে এক যোগে গাজায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। সাধারণ ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা ফেলে যাচ্ছে তারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আণবিক বোমার আঘাতে যেভাবে তছনছ হয়ে গেছে জাপানের হিরোশিমা, এর ৮০ বছর পরে গাজার একই পরিণতি দেখছে বিশ্ব।

গাজার হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক যে চিকিৎসা দেয়ার মতো ন্যূনতম সরঞ্জাম নেই ডাক্তারের কাছে। এতে চরম যন্ত্রণায় রয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা আহত ফিলিস্তিনিরা।

ফিলিস্তিনিদের একজন বলেন, ‘অনেক কষ্টে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু তার তেমন চিকিৎসা হচ্ছে না। যুদ্ধের কারণে কোন ধরনের ওষুধ নেই হাসপাতালগুলোতে। আমাদের ব্লকেড রেখে ধীরে ধীরে মেরে ফেলছে ইসরাইল।’

আরেকজন বলেন, ‘আমার ছেলের অবস্থা ভালো না। তার কিডনিতে সমস্যা। আল্লাহর দয়ার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই।’

বিপুল পরিমাণ সাহায্য না পৌঁছালে ফিলিস্তিনের গাজায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার বলেছেন, আমি যতটা পারি এই ১৪ হাজার শিশুকে রক্ষা করতে চাই।

এ পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরাইলের ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। সোমবার (১৯ মে) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারর্মার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো হুঁশিয়ারি দেন ইসরাইল যদি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা ঢুকতে বাধা দেয় তবে তেল আবিবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে তারা। এছাড়াও আরো ২২টি দেশ গাজায় জরুরি সহায়তা পাঠাতে ইসরাইলকে আহ্বান জানান।

তবে বিশ্বের প্রভাবশালী এসব দেশের নেতাদের থোরাই কেয়ার করছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। কোন আন্তর্জাতিক চাপই লক্ষ্য থেকে চুল পরিমাণ সরাতে পারছে না তাকে।

অপারেশন 'গিডিয়নস চ্যারিয়ট' নামে যে অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, পুরো গাজার দখল নেবে ইসরাইল, সেই সঙ্গে নির্মূল করা হবে হামাসাকে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাসকে নির্মূল ও সব বন্দিদের মুক্তির উদ্দেশে শুরু থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। গাজায় সহায়তা পাঠালে হামাস তা লুট করে নিয়ে যাবে। তবে সীমিত পরিসরে কিছু সাহায্য ফিলিস্তিনিদের জন্য পাঠানো হচ্ছে।’

মুখে আন্তর্জাতিক চাপ মানিনা স্বীকার করলেও আদোতে কিছুটা নমনীয় দেখা যাচ্ছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস পর গাজায় ৯ ট্রাক ত্রাণ পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবে বিশাল সমুদ্রে যা এক ফোঁটা পানির সমান বলে দাবি জাতিসংঘের। কারণ, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘১১ সপ্তাহ সম্পূর্ণ ব্লকেড রাখার পর গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরাইল। অবশ্যই তেল আবিবকে এজন্য ধন্যবাদ। তবে গাজায় ৯ ট্রাক সহায়তা সমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা পানির মতো।'

সেজু