এছাড়া মামলার প্রমাণ লোপাটের দায়ে ওই পাঁচ জনকে আরো ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং একই সাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আরমান হোসেন (৩৬), মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন (৩৯), মো. মামুন শেখ (৩৮) ও ইলিয়াছ মৃধা (৩৮) আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি আছাদ শেখ পলাতক রয়েছেন। পরে পুলিশ পাহারায় আদালত থেকে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদের সবার বাড়ি জেলার মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
এছাড়া মামলার অন্য আসামি মো. হাসান সিকদার ও মো. আশরাফুল শিকদারকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে খালাস করে দেয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহ মো. রাজন (২৮) বিকালে তার মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে থাকেন।
নিখোঁজের চার দিন পর রাজনের ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি মধুখালী উপজেলার তারাপুর শ্মশানঘাট সংলগ্ন মধুমতি নদীর পানিতে জেলেরা মাছ ধরার সময় পায়। পরে পুলিশ মামুনের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বসতঘর তল্লাশি করে মামুনের ব্যবহৃত প্যান্টের পকেটে রাজনের মোবাইল পায়। সেখানের কললিস্টের সূত্র ধরে আরমান হোসেনকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরমান স্বীকার করে রাজনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মামুনের সহায়তায় কৌশলে কুড়ানিয়ার চর এলাকায় একটি বাগানে ডেকে নিয়ে গিয়ে আছাদ ও মামুন শেখসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন ধারালো অস্ত্র দিয়া কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর তার মরদেহ বাগানের মাটির নীচে চাপা দিয়া রাখে। পরে পুলিশ মাটি খুড়ে রাজনের লাশ উত্তোলন করে।
হত্যাকাণ্ডে মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মরদেহের ময়নাতদন্তে বাধা দেওয়া, বিবিধ নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও পারিপার্শ্বিকতায় হত্যা, লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত রাজনের মা জোৎন্সা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে পুলিশ। দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শেষে আজ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রকিবুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, রাজনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনে। এ ঘটনায় রাজনের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শেষে আজ আদালতের বিচারক রাজন হত্যা মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন পলাতক। অন্যরা আদালতে হাজির ছিলেন। একই সাথে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া মামলার প্রমাণ লোপাটের দায়ে ওই পাঁচ জনকে আরো ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং একই সাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালতের বিচারক।