এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সরকারের জমি নিয়ে বিরোধের সূত্র তৈরি হয়। রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগের ঐ নেতা সালাউদ্দিন তৎকালীন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রীর পরামর্শে ঐ আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সরকার ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দাখিল করেন। সেখানে বলা হয় মো. আব্দুল রউফ সরকার বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।
সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামুকায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেই সভায় মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল রউফ সরকারের কোনো বক্তব্য না শুনেই এক তরফাভাবে তার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারসহ আরও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন আব্দুল রউফ সরকার। সেই রিট গ্রহণ করে আদালত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন, ‘রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রউফ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বহাল থাকবে এবং তার নিয়মিত ভাতা প্রদান করতে হবে।’
নথি পত্র ঘেটে দেখা যায় ১৯৭২ সালে হাবিবুল্লাহ বাহার স্বাক্ষরিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল রউফ সরকার ২০০৬ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষ্য, সনদ, দলিল দস্তাবেজ যাচাই-বাছাই শেষে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বকৃতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
একই সাথে ২০১৩ সালে তৎকালীন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এক চিঠিতে আব্দুর রউফ সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বকৃতি দেয়ার জন্য জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন।
তৎকালীন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পলাতক থাকলেও সালাউদ্দিন সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ সরকারকে ‘ভুয়া’ আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাতে থাকেন।
মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল রউফ সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৭১ সালে তিন নম্বর সেক্টরে ১১১ নম্বর গেরিলা ইউনিটে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সালাউদ্দিন সরকারের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় তার বিরুদ্ধে আমি একাধিক মামলা দায়ের করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাউদ্দিন সরকার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছেন।’
তিনি বলেন, ‘সালাউদ্দিন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি। মামলা নং-১৬।’
এ বিষয়ে সালাউদ্দিন সরকারের বক্তব্য জানতে চালাইতে তিনি বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধের সাথে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করার কোনো সম্পর্ক নাই ‘
জামুকা তার গেজেট বাতিল করেছে তবে উচ্চ আদালতের বিষয়টি বলা হলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।