সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতেই গেলো দুইমাস। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে গণআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তার রূপরেখা চূড়ান্ত করতেই ২০ মার্চ থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরিতে প্রায় দুমাসে আলোচনা হয়েছে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে।
৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবনা নিয়ে কয়েক দফা মতামত তুলে ধরেছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাতে যেমন অনেক সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তেমনি মতভেদ রয়েছে অনেক বিষয়ে। এখন প্রশ্ন, তাহলে কতটুকু অগ্রগতি হলো প্রথম ধাপের ধারাবাহিক সংলাপে?
এখন টেলিভিশনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংস্কারের চূড়ান্ত রূপরেখা নিয়ে এখনো বলার সময় আসেনি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত তার। তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে রাজনীতিতে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের মত ব্যবস্থা ঠেকানোর বিষয়টি মাথায় রেখেই মতামত রাখছে রাজনৈতিক দলগুলো।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, বলটা অনেকাংশ রাজনৈতিক দলের কোর্টে। সংস্কারগুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো হলেই আমরা ভবিষ্যত স্বৈরাচারকে ঠেকাতে পারবো। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি হলেই সংস্কারগুলো দ্রুত হয়ে যাবে এবং দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পথ প্রশস্ত হবে।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে গুণগত পরিবর্তন ছাড়া, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার মতো কিছু যেন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘মুগ্ধ-আবু সাঈদদের রক্তের দাগ কিন্তু এখনো মুছে যায়নি, আমরা তাদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে চাই না। স্বৈরাচার যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে; সেজন্য আমাদের যা কিছু করণীয়, করবো।’
রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে দ্রুতই প্রয়োজনীয় আইনকানুন পরিবর্তন করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পথ প্রশস্ত হবে বলেও মত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্যের। এ বিষয়ে সরকার আন্তরিক বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার। কতগুলো ক্ষেত্রে পরিবর্তন না আসলে আমাদের সেই ঝুঁকি থেকে যায় গত ১৫ বছরে যা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটার।’
এসময় তিনি বলেন, ‘সংবিধানে এমন কিছু সংস্কার আনা দরকার যাতে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দুর্নীতি ও টাকার খেলা বন্ধ করা যায়।’ এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থাসহ ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার ওপরও জোর দেন তিনি।