কোটি টাকার ফুটপাত ব্যবহারের অনুপযোগী

চট্টগ্রাম
পরিষেবা
অর্থনীতি
0

চট্টগ্রামে ৮শ' কিলোমিটার ফুটপাত তৈরিতে সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ'র ব্যয় অন্তত ৫শ' কোটি টাকা। অথচ অনেক এলাকার ফুটপাতের ৭০ শতাংশই ব্যবহার অনুপযোগী।

নিউমার্কেট এলাকার জামা-জুতা-প্রসাধনী হকার, স্টেশন রোডের চায়ের দোকান, কাতালগঞ্জে এই হাসপাতালের গাড়ি পার্কিং, মেডিকেলের অসংখ্য ওষুধের দোকান, নগরের এসব ফুল-ফলের ব্যবসা, বা স্থায়ী অস্থায়ী বাস কাউন্টার। আমাদের চোখ সওয়া নিত্য দিনের এইসব দৃশ্য দেখে মনে হবে চট্টগ্রামের ফুটপাত কেবল পথচারী ছাড়া, বাকী সবার।

সড়কের পাশে এক টুকরো জায়গা মানে যেন টাকা বিরাট আয়ের খনি। নির্মাণ ব্যয় ছাপিয়ে এসব ফুটপাতকে ঘিরে গড়ে উঠা দোকানপাট আর রমরমা ব্যবসা থেকে ঠিক কতগুণ টাকা আসে তার কোন হিসেব নেই। তাই প্রাণ খুলে ফুটপাতে হাঁটতে চাওয়ার নাগরিক অধিকার এই নগরে এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের কথাই ধরা যাক। এখানে হাঁটতে গেলে কখনো থেমে থেমে শম্বুক গতিতে, কখনো আঁকাবাঁকা এগিয়ে চলে কখনো বা ফুটপাত থেকে এভাবে সড়কে নেমে সামনে এগুতে হবে।

এক তরুণ জানান, 'কিছুদিন আগে আমার এক সহকর্মীকে রাস্তায় হাঁটার সময় পেছন থেকে অটো ধাক্কা দেয়। ফুটপাতে দোকানের কারণে সেখানে হাঁটা যায় না।'

আরেকজন জানান, বিভিন্ন ফুটপাতগুলো বলতে গেলে ব্যবসায়ীদের দখলে। আরও এক পথচারী জানান, ফুটপাতের কারণে চলাচলের রাস্তাটা খুবই সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

হকারদের একজন জানান, 'সামান্য পুঁজি নিয়ে নিয়ে এখানে ব্যবসা করতে পারি। মার্কেটে দোকান দিলে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমাদের তো এতো টাকা নেই।'

চট্টগ্রামের হকার্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর বলেন, 'নীতিমালা করার পরে আমাদের পুনর্বাসন করা হোক। আমরা রাস্তায় থাকতে চাই না। এখানে রোদ-বৃষ্টিতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।'

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নগরীতে সড়ক আছে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার, যার মধ্যে ফুটপাত আছে ৮০০ কিলোমিটার। যা তৈরিতে খরচ হয়েছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।

নগরের ৮ টি প্রধান এলাকার ফুটপাত নিয়ে ৭২০ জনের উপর চালানো এক গবেষণা বলছে, নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ৭৮ শতাংশ, কাস্টমস ও ইপিজেড এলাকায় ৭০ শতাংশের বেশি ফুটপাত ব্যবহারযোগ্য নয়। এছাড়া মুরাদপুর , দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট এলাকার ফুটপাতও তুলনামূলক কম ব্যবহারযোগ্য। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে কিছুটা ব্যবহার হচ্ছে টাইগারপাস ও জিইসি এলাকায় ফুটপাত।


|undefined

চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাতের চিত্র

চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি'র প্রভাষক ও গবেষক মো. হোসেন মানিক বলেন, 'টাইগারপাস ও জিইসি মূলত সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। কারণ, এগুলো ব্যবহার উপযোগী। পক্ষান্তরে আপনি যদি আগ্রাবাদ থেকে যে ফুটপাত সেটা ব্যবহার উপযোগী না। কারণ, সেখানকার অনেক জায়গা ভাঙা। অনেক জায়গায় আবার ফুটপাতও নেই।'

|undefined

ফুটপাতের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড

আর্ন্তজাতিক নিয়ম অনুসারে, আবাসিক এলাকায় ফুটপাতের প্রস্থ হবে ১০ ফুট, আর বাণিজ্যিক এলাকায় ১৬-২১ ফুট। কিন্তু নগরীতে সে নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তার কোনো তদারকি নেই। গবেষণায় ৪৫ শতাংশ মানুষের দাবি, ফুটপাত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার অভাব প্রকট, আর ৭৮ শতাংশ নারী নিরাপত্তার শংকায় রাতে ফুটপাত ব্যবহার করেন না।

এক নারী বলেন, 'ফুটপাতটা আমার জন্য খুব সিকিউর মনে হয় না। কারণ ওখানে বসে অনেক ছেলেরা খুব বাজে মন্তব্য করে। আবার ওখানে যদি লাইট বাড়িয়ে দেওয়া হতো, তাহলে মানুষেরও চলাচল বেশি হতো, আর আমরাও ওখানে সেইফ ফিল করতে পারতাম।'

সম্প্রতি সিটি করপোরেশন ও পুলিশের আর এক যৌথ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশী প্রান হারাচ্ছে পথচারীরা। যা ৫৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে ফুটপাত না থাকাকে দায়ী বলছেন গবেষকরা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, পথচারীরা সবচাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পথচারী বান্ধব শহর করতে হবে। ফুটপাতকে তৈরি করা, প্রশস্ত করা এবং মানুষ যাতে ফুটপাত ব্যবহার করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের ভেতর সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ফুটপাতের হকারদের পুনর্বাসনে প্রশাসন যেমন ব্যর্থ তেমনি চট্টগ্রামে পুলিশ, সিটি কর্পোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ফুটপাত দখলের অভিযোগ আছে অহরহ।

এসএসএস

আরও পড়ুন: