চীনে ভারী বৃষ্টি-বন্যায় প্রাণ গেছে ৩০ জনের

বেইজিংয়ে বন্যা
এশিয়া
বিদেশে এখন
0

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে টানা ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পার্বত্য অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ১৩০টির বেশি গ্রাম। দেশটির ৪১টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। জীবনরক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এদিকে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত তাইওয়ান।

টানা এক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিতে চীনের ৪১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশটির তিয়ানজিন ও হেবেই প্রদেশসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে বন্যা সতর্কতা। কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার প্রায় আট ফুট ওপর দিয়ে বইছে। এতে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন প্রদেশের নিম্নাঞ্চল। এদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের লুয়ানহে নদীর অববাহিকায় চলতি বছর প্রথমবারের মতো বন্যা দেখা দিয়েছে।

রাজধানী বেইজিংয়ে গেল একদিনেই এক বছরের সমান বৃষ্টি হয়েছে। শহরটিতে একদিনে রেকর্ড করা হয় ৫৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। যা বেইজিংয়ের প্রায় বার্ষিক গড় বৃষ্টির সমান। ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় রাজধানীতে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে উত্তরাঞ্চলীয় পার্বত্য অঞ্চলে।

সম্প্রতি উত্তর চীনে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হওয়ায় বেইজিংসহ ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে বন্যার ঝুঁকি বেড়েছে। এছাড়া আকস্মিক বন্যায় বেইজিংয়ের পার্বত্য অঞ্চলের লোকালয়সহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে পানিতে। প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবকিছু তলিয়ে গেছে। এক মুহূর্তের জন্যও বৃষ্টি থামেনি।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমার বাড়িটা পাহাড়ের ঠিক পাশেই। ভূমিধসে এরইমধ্যে দেয়াল ভেঙে গেছে। পানি যাওয়ার কোনো পথ নেই।’

আগের দিন বৃষ্টি ও বন্যার সতর্কতা জারি করে বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই বন্যাকবলিত ৮০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন বাড়ি ও রেস্তোরাঁর ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকজনকে। আকস্মিক বন্যায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ১৩০টির বেশি গ্রাম। পানির তোড়ে রাস্তাঘাট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

বেইজিংসহ হেবেই, জিলিন এবং শানডং প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রাণহানি কমানো ও জীবিতদের দ্রুত উদ্ধারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বন্ধ রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যাবতীয় নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। জনসাধারণের বাইরে চলাচল করা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

চীনের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী তিন দিন দেশটির উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। চীনের রেকর্ড বৃষ্টির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে তাইওয়ানে দ্বিতীয় দিনের মতো টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষিজমি, খামার ও আবাসিক এলাকা। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় তিন হাজার বাসিন্দাকে। বন্ধ রাখা হয়েছে দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শহরের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। একদিনে তাইওয়ানে ৩ ফুট পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এসএস