গৃহকর্মী নিয়োগে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখবেন?

গৃহকর্মী নিয়োগ
জীবনযাপন
0

শহুরে জীবনে গৃহকর্মীরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে ঘরের প্রতিটি কোণ পরিষ্কার রাখা—সবই তাদের নখদর্পণে। কিন্তু এই নির্ভরতার সমান্তরালে বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, অপরিচিত কাউকে ঘরে নেওয়ার আগে সচেতন হওয়া কতটা জরুরি।

আমাদের দিনের অনেকটা সময় কাটে অফিস কিংবা অসহনীয় যানজটে। ফলে ঘর সামলাতে আমাদের অনিবার্যভাবেই নির্ভর করতে হয় গৃহকর্মীর (Domestic Help) ওপর। কিন্তু যাদের ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে হয়, তাদের নিয়ে অনিরাপত্তার ঝুঁকিও কিন্তু কম নয়। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা বলয় জোরদার করতে গৃহকর্মী নিয়োগের সময় নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করুন:

আরও পড়ুন:

নিয়োগের আগে পরিচয় নিশ্চিতকরণ (Identity Verification Before Hiring)

গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো সঠিক পরিচয় না জেনে কাজে রাখা। আপনার ঘর ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথমেই নিয়োগকৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (National ID Card/NID) এবং জন্ম নিবন্ধনের মূল কপি যাচাই করুন। শুধুমাত্র মৌখিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কাউকে ঘরে ঠাঁই দেওয়া হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও চেহারা যাচাই (Passport Size Photo & Face Match)

চাকরিক্ষেত্রে যেমন ছবি জমা দিতে হয়, তেমনি গৃহকর্মীকে কাজে রাখার আগে তার সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (Passport Size Photograph) সংগ্রহ করুন। ছবির সাথে সরাসরি তার চেহারার মিল আছে কি না তা ভালো করে দেখে নিন।

জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (NID Photocopy Verification)

জাতীয় পরিচয়পত্র (National ID Card/NID) একজন নাগরিকের প্রধান পরিচয়। কোনো অপরাধ ঘটলে এনআইডি নম্বর ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অপরাধীকে খুঁজে বের করা সহজ হয়। তাই নিয়োগের আগে অবশ্যই এনআইডির ফটোকপি জমা নিন। কেউ এটি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নিয়োগ না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও পড়ুন:

সঠিক ঠিকানা ও শনাক্তকারীর তথ্য (Address & Guarantor Info)

গৃহকর্মীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং ফোন নম্বর লিখে রাখুন। সম্ভব হলে পরিচিত কাউকে দিয়ে সেই ঠিকানা নিশ্চিত (Address Verification) করুন। পাশাপাশি তাকে ভালোভাবে চেনে এমন অন্তত দু’জন শনাক্তকারীর (Guarantor/Reference) নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করুন। প্রয়োজনে ওই নম্বরগুলোতে ফোন দিয়ে তথ্য যাচাই করে নিন।

পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পরিচিতর সুপারিশ (Work Experience & Recommendation)

অপরিচিত লোকের চেয়ে পরিচিত মানুষের সুপারিশের ওপর নির্ভর করা সবচেয়ে নিরাপদ। আপনার বিল্ডিং বা আবাসিক এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করছেন এমন কাউকে অগ্রাধিকার দিন। নতুন এলাকায় গেলে বাড়ির মালিক বা কেয়ারটেকারের সুপারিশ নিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রেও ছবি ও পরিচয়পত্র সংগ্রহের নিয়মটি এড়িয়ে যাবেন না।

এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ (Hiring via Agencies)

বর্তমানে অনেক প্রফেশনাল এজেন্সি (Domestic Help Agencies) গৃহকর্মী সরবরাহ করে। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে খুঁজে না পেলে এসব এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন, কারণ তারা সাধারণত কর্মীদের তথ্য যাচাই করেই নিয়োগ দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:

পুলিশ ভেরিফিকেশন ও তথ্য সংরক্ষণ (Police Verification and Data Collection)

নিয়োগের পরপরই গৃহকর্মীর নাম, ছবি, স্থায়ী ঠিকানা এবং তার পরিবারের সদস্যদের তথ্য নিকটস্থ থানায় (Police Station) জমা দিন। ডিএমপি-র নির্ধারিত ‘গৃহকর্মী তথ্য ফরম’ (Domestic Worker Info Form) পূরণ করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়া তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলের রেফারেন্স (Previous Work Reference) যাচাই করা জরুরি। তিনি আগে কোথায় কাজ করেছেন এবং কেন ছেড়েছেন, তা জানতে পারলে সম্ভাব্য ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

সতর্ক চোখ ও প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা (Monitoring and Technological Safety)

মোহাম্মদপুরের ঘটনার মতো ট্র্যাজেডি এড়াতে গৃহকর্মীর গতিবিধি লক্ষ্য করুন। সিসিটিভি ক্যামেরা (CCTV Camera) স্থাপন করা এখন ঘরোয়া নিরাপত্তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়া বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র ও আলমারির চাবি (Locker Keys) সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত বিশ্বাস কখনো কখনো বিপদের কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন:

থানায় গৃহকর্মীর তথ্য জমা দেওয়ার অনলাইন পদ্ধতি: ঘরে বসেই নিশ্চিত করুন নিরাপত্তা

ডিজিটাল পুলিশিং: রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধীদের ডাটাবেজ তৈরি করতে পুলিশ এখন অনলাইন তথ্য সংগ্রহে জোর দিচ্ছে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি গৃহকর্মীর তথ্য অনলাইনে সাবমিট করতে পারেন:

ধাপ ১: মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার (Using 'CIM' App)

১. গুগল প্লে-স্টোর থেকে 'Citizen Information Management' (CIM) বা ডিএমপি-র নির্ধারিত অ্যাপটি ডাউনলোড করুন।

২. আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।

৩. অ্যাপের ভেতরে 'Domestic Help' বা 'গৃহকর্মী' অপশনটি সিলেক্ট করুন।

৪. সেখানে গৃহকর্মীর নাম, ছবি, এনআইডি নম্বর এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ইনপুট দিন।

ধাপ ২: ডিএমপি ওয়েব পোর্টাল (Via DMP Web Portal)

১. ডিএমপি-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা সিটিজেন পোর্টাল (dmp.gov.bd) এ যান।

২. 'ভাড়াটিয়া/গৃহকর্মী তথ্য ফরম' লিঙ্কে ক্লিক করুন।

৩. ফরমটি অনলাইনে পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (এনআইডি ও ছবি) আপলোড করে সাবমিট করুন।

ধাপ ৩: বিট পুলিশিং সহায়তা

অনলাইনে সমস্যা হলে আপনার এলাকার 'বিট পুলিশিং' অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও গৃহকর্মীর ছবি ও এনআইডি পাঠিয়ে তথ্য নিবন্ধিত করতে পারেন। এতে সরাসরি থানায় যাওয়ার ঝামেলা পোহাতে হয় না।

আরও পড়ুন:

বিট পুলিশিং অফিসারের নম্বর খুঁজে বের করার উপায়

১. DMP অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (DMP Website): ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট dmp.gov.bd এ গিয়ে 'Beat Policing' সেকশনে আপনার থানার নাম সিলেক্ট করলে ওই এলাকার নির্দিষ্ট বিট অফিসারের নাম ও মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়।

২. থানার ডিউটি অফিসারের নম্বর (Thana Duty Officer): প্রতিটি থানার একটি অফিসিয়াল মোবাইল নম্বর থাকে। গুগলে আপনার থানার নাম লিখে সার্চ করলে (যেমন: 'Mohammadpur Thana Contact Number') নম্বরটি পাবেন। সেখানে ফোন করে আপনার নির্দিষ্ট এলাকার (যেমন: রোড বা ব্লক) বিট অফিসারের নম্বর চেয়ে নিতে পারেন।

৩. এলাকার সাইনবোর্ড বা ফেস্টুন: রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় প্রবেশপথে বা মোড়ে মোড়ে বিট পুলিশিংয়ের সাইনবোর্ড লাগানো থাকে। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারের ছবি ও মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে।

৪. থানা বা বিট অফিস পরিদর্শন: নিকটস্থ থানায় গিয়ে নোটিশ বোর্ড চেক করলে বা দায়িত্বরত পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসা করলে আপনার এলাকার বিট অফিসারের কার্ড বা নম্বর সংগ্রহ করতে পারেন।

৫. ৯৯৯ হেল্পলাইন (Emergency 999): জরুরি প্রয়োজনে বা বিট অফিসারের নম্বর না পেলে ৯৯৯-এ কল করে আপনার এলাকার তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা বা বিট অফিসারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম জেনে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন:

এসআর