বর্ষবরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন; আনন্দ শোভাযাত্রায় থাকবে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনবিরোধী বার্তা

১৪৩২ বরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন; বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় থাকবে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনবিরোধী বার্তা
শিল্পাঙ্গন
দেশে এখন
0

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন। ছায়ানট ও চারুকলা আয়োজন করছে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, যেখানে অংশ নেবে সব ধর্ম, বর্ণ ও দেশের ২৮টি জাতির মানুষ। চারুকলা ফিরছে তার শিকড়ে, শোভাযাত্রার নাম দিয়েছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ২১টি মোটিফে থাকবে বৈচিত্র্য, আর চোখে পড়বে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনবিরোধী বার্তা। প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও। আয়োজকরা বলছেন, থাকবে ঐক্যের বার্তা ও শান্তির আহ্বান।

নতুন ভোরের আহ্বানে সুরের ঐকতান। এ যেন নতুনের কণ্ঠে নতুনের জয়গান।

বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজন করে আসছে সুরের এ অনুষ্ঠান। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় চলছে শেষ মুহূর্তের সুর, তাল ও লয়ের প্রস্তুতি। নববর্ষের দিন ভোরের প্রথম আলো ছুঁতেই ভৈরবী রাগে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণের আয়োজন। এবারের শিল্পীদের মধ্যে তরুণরাই বেশি।

ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, 'এতবছর যাবৎ আমরা যেভাবে করে আসছি, সেই ধারাটাকেই বিভিন্ন গান, আবৃত্তি ও পাঠের মধ্য দিয়ে অব্যাহত রাখা হবে। অবাক করা ব্যাপার হলো এবার ছোটদের সংখ্যা বড়দের তুলনায় বেশি।'

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রথমবারের মতো পহেলা বৈশাখে আয়োজন করে আনন্দ শোভাযাত্রা। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এটি পরিচিতি পায় 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামে। সময়ের ধারায় এই উৎসব আজ বাঙালির প্রাণের উৎসবে রূপ নিয়েছে। রং, রূপ আর বৈচিত্র্যে হয়েছে আরও সমৃদ্ধ।

এবার চারুকলা অনুষদ ফিরছে সেই শিকড়ে, ফিরে দেখছে শুরুর দিনগুলোকে। তাই মঙ্গল শোভাযাত্রা সেই পুরোনো নাম মেখেছে। এবারের নাম বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন এসব আয়োজনে বাদ পড়েছে অনেক ধর্ম ও জাতি। তাই এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান। ইনক্লুসিভ বৈশাখ হবে। এবারের আয়োজন কাউকে বাদ দিয়ে নয়।

রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, 'অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট চিন্তা এবং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের যে চেষ্টা সেটাকেই এইসকল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে।'

শোভাযাত্রায় থাকছে ছোট-বড়-মাঝারি ২১টি মোটিফ। এর মধ্যে ৭টি বড় মোটিফের একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি। তবে ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। নববর্ষের দুই দিন আগে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই মুখাকৃতি। তবে আবারও নতুন করে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি নির্মাণ করেছে চারুকলা। এছাড়া ফিলিস্তিনের পতাকার রঙে থাকবে তরমুজ একাত্মতার প্রতীক হিসেবে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

প্রাক্তন একজন ছাত্র বলেন, 'বিক্ষোভ, প্রতিবাদে সবসময় আমাদের হাতে থাকে রং-তুলি। সেটা দিয়েই আমরা সবার সাথে সংহতি প্রকাশ করি।'

তিনি বলেন, 'আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে ঠিক বৈশাখীর আগের দিন রাতে।'

গোটা আয়োজন সাজানো হয়েছে নতুন আলোয়। থাকছে দেশের সকল ধর্ম, বর্ণ ও জাতির মানুষ। বাঙালি ছাড়াও ২৭ জাতির মানুষ অংশ নিবে এই শোভাযাত্রায়।

ফরহাদ মজহার বলেন, 'এই জাতীয় উৎসবটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা নতুন বার্তা, সেই বার্তাটা কাউকে বাদ দেবার বার্তা নয়, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার।'

প্রথমবারের মতো বামবার নেতৃত্বে ব্যান্ড দল ও সাইমুমের নেতৃত্বে ইসলামিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অংশ নেবে।

ওয়ারফেজের দলনেতা শেখ মনারুল আলম টিপু বলেন, 'ব্যান্ড মিউজিশিয়ান্স এবং ব্যান্ড পরিবেশনা যারা পছন্দ করে তারা আসবেন এই আয়োজনে। আমরা সবাইকে বলেছি, মাইকেল জ্যাকসনের হিল দ্যা ওয়ার্ল্ড করে আসতে। আমরা য়খন হাঁটবো, তখন দেশের জনপ্রিয় গানগুলো গাইতে গাইতে হাঁটবো।'

সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'সরকার আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে যে, আমরা সবাইকে নিয়ে একটা আয়োজন করতে চাই। সাইমুমের সমর্থন থাকবে এটাতে। আর সাইমুমের আলাদা পরিবেশনা থাকবে শাহবাগে।'

শোভাযাত্রা শুরু হবে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯ টায়। চারুকলা অনুষদ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে আবার চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হবার কথা বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

এসএইচ