হোক মোড় কিংবা মাঝপথ। চাইলেই থেমে যাচ্ছে বাস-ইচ্ছেমত। যাত্রী ওঠানো হচ্ছে ফুট বোর্ডে ঝুলে থাকা পর্যন্ত। এতে কার কী হচ্ছে সেটাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন এসব অনিয়মই নিয়ম।
শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রংচটা এসব স্বেচ্ছাচারী বাহনগুলো। গণঅভ্যুত্থান, রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক সরকার কিছুতেই কিছু হয় না সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরির এসব বাস মালিক, শ্রমিক কিংবা ড্রাইভারদের।
সমস্যা শুধু ফিটনেস হলে না হয় মানিয়ে নিতো শহরবাসী! কিন্তু একদিকে কালো ধোঁয়া আরেকদিকে কান ফাটানো হাইড্রোলিক হর্ন, অন্তত সড়কের চিত্র গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিপ্লবী জনতার অভিজ্ঞতায় যে একটুও পরিবর্তন হয়নি, সেটা স্বীকার করবেন যে-কেউ। কিন্তু এভাবেই কেন চলছে?
এক বাসচালক বলেন, ‘ট্রাফিক থাকলে এভাবে দাঁড়ায় না কেউ। এখন ট্রাফিক নেই তাই যাত্রী নামাচ্ছে।’
এটা ঠিক গণঅভ্যুত্থানের পর কিছুদিন এলোমেলো নগরীর যান চলাচল নিয়মের মধ্যে আনতে বাধ্য করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে নগরবাসীর মাঝেও এসেছিল কিছুটা স্বস্তি। তারই সূত্র ধরে, সড়ক ব্যবস্থাপনায় একটা আমূল পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, সেটি কতদূর?
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের ট্র্যাডিশনাল যে ব্যবস্থাপনা সেখানে পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। বরং দেখছি যে অটোরিকশা পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো এবং সেটাও সরকার কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। এই যে শহরের যাপিত জীবনের সমস্যা সেটা নিয়ে কি কোনো কমিশন হয়েছে? অগ্রাধিকারে না থাকলে তো উত্তরণের কোনো পথ থাকবে না।’
বড় দাগে সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পড়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের। সরকারের হয়ে কাজ করা এসব সংস্থার কর্তাদের কাছে প্রশ্ন ছিলো, কেন শৃঙ্খলা ফেরাতে পারছেন না সড়কে?
বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত ডাম্পিং গ্রাউন্ড নাই। যেখানে আমরা গাড়িগুলো ধরে ডাম্প করতে পারবো। ফলে এ গাড়িগুলো তখন একটা সমস্যার কারণ। আরেকটা হচ্ছে আমাদের স্ক্র্যাপ নীতিমালা এখনো হয়নি। ফলে আমি যদি কোনো গাড়িকে ডিজম্যান্টেল করি, সেটার একটা নীতিমালা লাগবে।’
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, কারণে অকারণে সময়ে-অসময়ে বসে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে। এটা কিন্তু ঢাকা মহানগরীতে বড় একটা প্রভাব ফেলেছে। বাস ড্রাইভার, হেল্পাররা যদি সচেতন হন তাহলে এটার সুবিধাভোগী তারাই হবে।’
২০২২ সালে বিশ্বব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীতে সময়ের সাথে সাথে কমেছে গাড়ির গড় গতি। আর দৈনিক নষ্ট হচ্ছে ৮২ লাখ কর্মঘণ্টারও বেশি। এর প্রভাবে আর্থিক ক্ষতিতো আছেই।
অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও নগরীর পুরনো ব্যাধি যানজটের চিত্র রয়ে গেছে আগের মতোই। ঠিক কবে সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে কিংবা আদৌ মিলবে কি-না, এ প্রশ্নই এখন নগরবাসীর মনে।