রোগ থেকে মুক্তি পেতে কোরআনের যে ৬ আয়াত পড়বেন

আল্লাহর বাণী: রোগ মুক্তির ৬টি বিশেষ আয়াত ও তার অর্থ
ধর্ম ও বিশ্বাস
0

সুস্থতা এবং অসুস্থতা—উভয় অবস্থাই মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। জীবনের চলার পথে রোগ-বালাই একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে মুমিনদের জন্য পবিত্র কুরআনে কারীমের (Holy Quran) কিছু বিশেষ আয়াতকে 'শেফা' বা আরোগ্য লাভের উপায় (Ayat for Cure) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই ৬টি পবিত্র আয়াতকে একত্রে "আয়াতে শেফা" (Ayate Shifa) নামে অভিহিত করা হয়। এর প্রতিটি আয়াতেই 'শেফা' (আরোগ্য) এবং 'রহমত' এর সুসংবাদ রয়েছে।

যখন মানুষ নানা রকম ছোট বা বড় রোগে আক্রান্ত (Sickness) হয়ে অসুস্থ হয় এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, তখন এটিও আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুযোগ। অসুস্থতা হলো মুমিনের গুনাহ ক্ষমার (Forgiveness) এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধির (Increase in Status) মাধ্যম। অসুস্থতা বান্দাকে আল্লাহর কাছে আরও বেশি করে আরোগ্য কামনা করতে শেখায়।

আরও পড়ুন:

মহানবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন: “আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি।” — (সহীহ বুখারী, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৮৪৮, হাদীস নং-৫২৭৬; তাফসীরে কুরতূবী, খন্ড-১০ম, পৃষ্ঠা-২৩৫) এই হাদিসটি মুমিনদের জন্য একটি গভীর আশ্বাস যে, প্রতিটি অসুস্থতার বিপরীতেই আল্লাহ নিরাময় বা প্রতিষেধক (Cure) তৈরি করে রেখেছেন, এবং তা অন্বেষণ করা বান্দার কর্তব্য।

এই বিশেষ আয়াতগুলোর ফজিলত ও আমলের পদ্ধতি নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

'আয়াতে শেফা' এর তাৎপর্য (Ayate Shifa Meaning and Lesson)

তফসীরবিদ ইমাম বায়হাকী (রহ.) 'শেফা' (Shifa) বলতে শুধু দৈহিক রোগ থেকে মুক্তি নয়, বরং আত্মা এবং দেহ (Soul and Body) উভয়ের নিরাময়কে বুঝিয়েছেন। বুজুর্গানে দ্বীনদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বিশেষ পদ্ধতিতে এই আয়াতগুলো পাঠ করলে শারীরিক ও আত্মিক উভয় ক্ষেত্রে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। অনুশীলন শুরু করার পূর্বে সূরা ফাতিহা (Surah Fatiha) পড়ে নেওয়া উত্তম।

আরও পড়ুন:

৬টি পবিত্র আয়াত ও তার অর্থ (The Six Holy Verses and Meanings)

পবিত্র কুরআনের কিছু বিশেষ আয়াত মুমিনদের জন্য দৈহিক ও আত্মিক রোগ মুক্তির বার্তা বহন করে। এই ছয়টি আয়াতকে বুজুর্গানে দ্বীনরা একত্রে "আয়াতে শেফা" (Ayate Shifa) নামে অভিহিত করেছেন। প্রতিটি আয়াতই আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোগ্য (শেফা) এবং রহমত লাভের নির্দেশনা দেয়। এই ছয়টি আয়াত, তাদের আরবি পাঠ, সঠিক উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ নিচে ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হলো:

অনুশীলন শুরু করার পূর্বে সূরা ফাতিহা (Surah Fatiha) পড়ে নেওয়া উত্তম।

১. সুরা তাওবা (৯) : ১৪

এই আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের অন্তরের শান্তি ও সুস্থতার কথা বলেছেন।

  • আরবি: وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
  • উচ্চারণ: ওয়া ইয়াশফি ছুদু-রা ক্বাওমিম মু’মিনি-ন।
  • অর্থ: এবং আল্লাহ মু’মিনদের (মুসলমানদের) অন্তরসমূহ শান্ত করে দেন।

আরও পড়ুন:

২. সুরা ইউনূস (১০) : ৫৭

এই আয়াতে কুরআনকে অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • আরবি: وَشِفَاۤءࣱ لِّمَا فِی ٱلصُّدُورِ وَهُدࣰى وَّرَحۡمَةࣱ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ
  • উচ্চারণ: ওয়া শিফাউ’ল লিমা- ফিচ্ছুদু-রি ওয়া হুদাও ওয়া রাহমাতুল লিল মু’মিনি-ন।
  • অর্থ: এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।


৩. সুরা নাহল (১৬) : ৬৯

এই আয়াতে প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার থাকার কথা বলা হয়েছে (বিশেষত মধুর প্রসঙ্গে)।

  • আরবি: یَخۡرُجُ مِنۢ بُطُونِهَا شَرَابࣱ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَا⁠نُهُ فِیهِ شِفَاۤءࣱ لِّلنَّاسِ
  • উচ্চারণ: ইয়াখরুঝু মিমবুতু-নিহা- শারা-বুম মুখতালিফুন, আলওয়ানুহু- ফি-হি শিফা-উ লিন্না-সি।
  • অর্থ: তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার।


৪. সুরা বনী ইস্রাঈল (১৭) : ৮২

কুরআন নিজেই যে রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত, এই আয়াতে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

  • আরবি: وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَاۤءࣱ وَّرَحۡمَةࣱ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ
  • উচ্চারণ: ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল ক্বুরআ’নি মা হুয়া শিফাউও ওয়া রাহমাতুল লিলমু’মিনি-ন।
  • অর্থ: আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।

আরও পড়ুন:

৫. সুরা আশ্-শোয়ারা (২৬) : ৮০

এখানে আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতা স্বীকার করে বলা হয়েছে যে তিনিই আরোগ্য দানকারী।

  • আরবি: وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
  • উচ্চারণ: ওয়া ইজা মারিদতু ফা হুয়া ইয়াশফি-নি।
  • অর্থ: এবং (যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন)।


৬. সুরা হা-মীম (৪১) : ৪৪

এই আয়াতে বিশ্বাসীদের জন্য কোরআনকে হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার হিসেবে পুনরায় জোর দেওয়া হয়েছে।

  • আরবি: قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَّشِفَاءٌ
  • উচ্চারণ: কুল হুওয়া লিল্লাযীনা আ-মানূ হুদাওঁ ওয়া শিফাউন।
  • অর্থ: (বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার)।

আরও পড়ুন:

আয়াতে শেফার এই ছয়টি আয়াত শুধু পাঠের জন্য নয়, বরং আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস (Tawakkul) ও তাঁর রহমতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার একটি মাধ্যম।

তাফসীরবিদ ইমাম বায়হাকী (রহ.) এর মতে, 'শেফা' (Shifa) শব্দটি আত্মা এবং দেহ—উভয়ের নিরাময়কে অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ, এই আয়াতগুলো আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য কার্যকর।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আল্লাহ পাক এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি।" (বুখারী, হাদীস নং-৫২৭৬)। অর্থাৎ, আরোগ্য লাভের পথ অবশ্যই বিদ্যমান, আর কুরআন সেই পথের দিশা দেয়।

প্রখ্যাত তাফসীরবিদগণ জোর দিয়ে বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোরআনের মাধ্যমে আরোগ্য তালাশ করে না, তার কোনো শেফা নেই।" (তাফসীরে কুরতুবী)। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, কুরআনের নিরাময়কারী শক্তিকে স্বীকার করে নেওয়া ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এসআর