হালখাতার একাল-সেকাল

হালখাতার একাল-সেকাল
দেশে এখন
শিল্পাঙ্গন
0

নববর্ষ ঘিরে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ব্যবসায়ীদের হালখাতার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকির প্রচলন কমে যাওয়ায় জৌলুস হারাচ্ছে হালখাতা। মিষ্টির দোকানে নাই হালখাতা উপলক্ষে আগাম ক্রয়আদেশ, কমেছে লাল-সাদা টালি খাতার বিক্রিও। ঢাকা বিষয়ক গবেষকরা বলছেন, বাংলা সনের সাথে মিল রেখে অর্থবছর গণনায় ফিরতে পারে হারানো ঐতিহ্য।

বাংলা নতুন বছরের শুরুতে ব্যবসায়ীদের লালসালু মোড়ানো নতুন খাতায় লেনদেন হালনাগাদ করা শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। নববর্ষকে বরণ করে নিতে নানা প্রস্তুতির সঙ্গে এ পুরোনো রীতি ধরে রাখতে বিভিন্ন দোকানে চলে ধোয়া-মোছাসহ রঙের কাজ।

এতে কর্মচারীদের মাঝে কাজ করছে বাড়তি আনন্দ তবে অল্প সময়ে রীতিনীতি পরিবর্তনে হালখাতার আয়োজনের পরিধি কমেছে। নাই আগের মতো প্রস্তুতিও, তারপরও ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের একদিন আগেই হালখাতার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, 'ধোয়া-মোছা, রং-পালিশের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। সামনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাহকরা আসবে, আমরা তাদেরকে মিষ্টিমুখ করাবো।'

আরেকজন বলেন, 'পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমরা গ্রাহকদের উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকি এবং তাদের দেনা-পাওনা সম্পর্কে ধারণা দেই।'

নববর্ষে নতুন হিসাব লেখার এ খাতায় বাঙালি বনেদি ব্যবসায়ীদের সংস্কৃতির শেকড়ে গাঁথা। সময়ের বিবর্তনে বাঙালির সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অমোচনীয় লালিত ঐতিহ্য ও ইতিহাস এখন কেবল নিয়ম রক্ষার আনুষ্ঠানিকতা।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরেকজন বলেন, 'এখন গ্রাহকদের সাথে ব্যবসায়ীদের বোঝাপড়া নেই। সেজন্য এখন বাকি দেয়া অনেকটা নিষিদ্ধই বলা চলে।'

একসময় হালখাতার আয়োজন পুরাণ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জমজমাট হলেও বর্তমানে তাঁতিবাজারের স্বর্ণপট্টিতেই এই আয়োজন চোখে পড়ে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাকির প্রচলন কমে যাওয়ায় হালখাতার ঐতিহ্য কমে আসছে। তবে এখন পাওনা আদায়ের বাইরে ক্রেতাকে করা হয় মিষ্টি মুখ।

রীতিনীতি পরিবর্তনে কমেছে লাল-সাদা টালি খাতার কদর। হালখাতার আগে টালি খাতার চাহিদা থাকলেও এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, কমেছে বেচাবিক্রি।

অন্যদিকে হালখাতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মিষ্টির সাধু রসদ। আপ্যায়ন করানোর প্রধান পদে নেই আগাম আদেশ।

পুরান ঢাকার বনেদি ব্যবসায়ীরা স্মৃতিচারণ করে বলছেন, দূর অতীতে ব্যবসায়ী খাতা খোলার বাইরে পারিবারিকভাবে আয়োজন করে সবাইকে মিষ্টিমুখ করা হতো ঐদিন। তবে, ঢাকা বিষয়ক গবেষকরা মনে করেন বাংলা সনের সাথে মিল রেখে অর্থবছর গণনা হলে ফিরতে পারে হারানো ঐতিহ্য।

ঢাকা ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী হাশেম সূফী বলেন, 'বাংলা সন, মানে বৈশাখ থেকে চৈত্র গণনা পদ্ধতি চালু করে তাহলে আবার সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা ফিরে আসবে।'

হালখাতা আয়োজনে ভাটা পড়লেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ উপলক্ষ্যে মূল্যছাড় দেবেন পুরাণ ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

এসএইচ