বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো ভিসি এবং ট্রেজারার তিনজনই ৫ আগস্টের পর নিয়োগ পান। তবে মাত্র ৩ মাসের মাসের মধ্যেই ভিসির সাথে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার এবং শিক্ষকদের একাংশের সম্পর্ক তেতো হয়ে গেছে। প্রো-ভিসির অভিযোগ, তাকে কাজ করতে দেন না ভিসি। এমনকি নিজ থেকে কাজ করার চেষ্টা করলে তাতেও চিঠি দিয়ে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ তার।
ববি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘একাডেমি অগ্রগতি জানার জন্য চেয়ারম্যানকে ছোট্ট একটা চিঠি দেয়া হয়েছিল। এই চিঠি যাওয়ার পড়ে উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্টার আমাদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন এটা বিধিবহির্ভূত।’
প্রায় একই অভিযোগ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার। জানালেন, ভিসির সঙ্গে কথা বলারই সুযোগ পান না তিনি। আর তাতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ, লেনদেনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ববি ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. মামুন অর রশিদ বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর কাছ থেকে কোনো ফাইল বা সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার হয় তখন তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না।’
গত পাঁচ মাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট শিক্ষকদের একাংশ। প্রতি তিন মাসে একটি সিন্ডিকেট সভা আয়োজনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘নিয়মকানুন প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না দেখানোর কারণে এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম অনুযায়ী না চালানোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডাররা যেমন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’
ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের রেশ ছড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝেও। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভিসির বাস ভবনের গেট ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে ১৭ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ভিসির দাবি, তার প্রতি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেশিরভাগই সন্তুষ্ট। যারা স্বার্থ হাসিলের সুযোগ পাচ্ছেন না তারা ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তার।
ববি উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘যে দুটো অভিযোগ করেছেন উনারা তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অসত্য। এখানে বহিঃশক্তি কাজ চলছে এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র, তা না হলে আমার বিরুদ্ধে লাগার কোনো কারণ নেই। আমি বাংলাদেশের একমাত্র নারী ভাইস চ্যান্সেলর। আমার বিশ্বাস আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে সেই রকম ভালোবাসে এবং অধিকাংশ শিক্ষকও আমাকে ভালোবাসেন।’
প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ ভিসির পরামর্শ ও পছন্দে হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আর সেটা না হওয়ায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা হচ্ছে বলে দাবি তার।
ববি উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘প্রো-ভিসি ও উপ উপচার্য ও ট্রেজারার যারা নিয়োগ হচ্ছেন সবার মধ্যে যদি একই আকাঙ্ক্ষা থাকে যে আমি ভিসি হব যদি উনাকে ফেলে দিতে পারি। তাহলে এখানে আমি নারী ভাইস চ্যান্সেলর আছি অন্য জায়গায় পুরুষরা আছেন। তারা ভেবেছেন নারীকে খুব সহজেই সরিয়ে দেয়া যাবে।আমি খুব ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ কোনো সময় কোনো অন্যান্য করি না।’ তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সংকট সমাধানের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।