ফরিদপুর সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, বিকাশ, নগদ ও অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি সেজে দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। তারা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট, পিন ও ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অবৈধভাবে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছিল।
১৫ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে তিন দিনব্যাপী এ চক্রের প্রযুক্তিগত ব্যবহার, ভৌগোলিক অবস্থান এবং আর্থিক লেনদেন পদ্ধতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে। তথ্য বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে, প্রতারিত অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশে সক্রিয় শতাধিক অনলাইন জুয়া ও বেটিং সাইটে প্রবেশ করানো হতো।
এ চক্র বিশেষ সফটওয়্যার ও স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ‘শতভাগ জয়’ নিশ্চিত করে জুয়ার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত। এরপর ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা তৈরি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাচার করা হতো।
মধুখালী থানার ওসি এসএম নুরুজ্জামান জানান, প্রায় সাত ঘণ্টাব্যাপী পরিচালিত এ অভিযানে প্রতারণা চক্রের মূলহোতা ও উক্ত এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মো. কামরুল মিয়াসহ (৪০) তার চার সহযোগী— অমরেশ বিশ্বাস (৩০), সোহান মালিক (২৪), হাফিজুর রহমান (৪২) এবং শেখ শাকিল আহমেদকে (২৬) আটক করা হয়।
এ সময় আটকদের কাছ থেকে ১০৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪২টি গ্রামীণফোন সিমকার্ড এবং ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এ প্রতারণা চক্রের বিস্তার কেবল ফরিদপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই তাদের তৎপরতা ছিল। এটি দেশের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ডিজিটাল প্রতারণা।’
আটকদের মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সাইবার অপরাধ দমন আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, এ অভিযানের মাধ্যমে একটি সক্রিয় ও সুসংগঠিত ডিজিটাল প্রতারণা ও অর্থপাচার চক্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে।