জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা বাগানে ৭ হাজার শ্রমিকের নামে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা প্রাপ্তির জন্য বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও বিকাশ নাম্বার তালিকাভুক্ত করে সমাজসেবা অফিসে জমা দেন।
তাদের জনপ্রতি ৬ হাজার করে বিকাশে টাকা প্রদান করা হয়। তালিকায় কেউ কেউ তাদের নিজেদের পরিবারের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোনের নাম ও বিকাশ নাম্বার জমা দিয়েছেন। আবার অনেক চা শ্রমিক পরিবার সদস্যের নাম ও বিকাশ নাম্বার স্থান পায়নি তালিকায়।
এছাড়াও একজনের আইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদকের ছেলের বিকাশে টাকা নেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের এ টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা আজ (রোববার, ২০ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়াও শমশেরনগর বাগানের শ্রমিক নেতা গোপাল কানু শ্রীকান্তের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা রেলী। আরও অভিযোগ করেন শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক গোপাল গোয়ালা, রিশু বাগতি, নিলু রাজভর, জগদিশ বাউরী প্রমুখ।
বাবুল রেলী বলেন, ‘চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকদের নাম, ভোটার আইডি কপি নিয়ে কতিপয় নেতারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ইউএনও সাহেবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
শমশেরনগর চা বাগানের বড়লাইনের শ্রমিক রামাকান্ত যাদব বলেন, ‘তালিকায় আমার নাম ও ভোটার আইডি নাম্বার ঠিক আছে। কিন্তু টাকা আমি পেলাম না। বিকাশ নম্বর আমার নয়। আমি মেম্বারকে জানিয়েছি আমার টাকা পাইনি।’
একই বাগানের শ্রমিক পারতালি তেলেঙ্গা, আদমটিলার শ্রমিক দুলাল শীল, রবিদাস টিলার প্রিতী পাল জানান, তাদের নাম, আইডি ও বিকাশ নাম্বার নিয়ে তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। এরপরও তারা টাকা পাননি।
বাগানের ভজনটিলার শ্রমিক শিমুল লোহার বলেন, ‘অন্যের নামে আমার বিকাশে টাকা আসে। পরে আমার পাশের বাড়ির বাসিন্দা জয়প্রকাশ রাজভর এসে আমার মোবাইল নিয়ে টাকা তুলে আমাকে ২ হাজার দিয়ে বাকি টাকা সে নিয়ে গেছে।’
বড় লাইনের বাসিন্দা ছবি লোহার জানান, তার আইডি ও নামে ৬ হাজার টাকা ঢুকে নির্মল ছত্রির বিকাশে। এটি জানার ১৫ দিন পরে তাকে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপকারভোগী তালিকায় শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক নেতা নির্মল দাস পাইনকা, তার স্ত্রী, মেয়ে ও তার আপন ভাইয়ের স্ত্রী, ভাই, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও ৩ মেয়ের নাম রয়েছে।
একইভাবে শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু, স্ত্রী রিনা কানু, ভাইয়ের বউ রিপা কানু, বোন হেমন্তি কানু, ভাই হৃদয় প্রকাশ কানু, ভাইয়ের স্ত্রী শিপা কানুর নাম ও বিকাশ নাম্বার রয়েছে। এছাড়াও চা শ্রমিক সুরনারায়ন রেলী সরাইয়ার পরিবারের ৮ জনের নাম ও বিকাশ নাম্বার পাওয়া যায়।
শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল বলেন, ‘তালিকা দিয়েছেন অনেকেই। যে যেভাবে তালিকা দিয়েছে, সেভাবে টাকা আসছে। আমার ছেলের বিকাশে যার টাকা আসছে, সে নিজেই আমার ছেলের নাম্বার দিয়েছে। আমার পরিবারে দু’জনের নামে টাকা এসেছে। ভাইয়েরা তো আলাদা পরিবার। তারাও তো প্রাপ্য।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কমিটির সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা বলেন, ‘আমার জীবনে এভাবে কখনো হয়নি। তবে অসুস্থতায় চিকিৎসার কথা বলেছিলাম। তাই পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ আমার পরিবারের তালিকা দিয়েছে। এজন্য আমি খুবই দু:খিত।’
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির তদন্ত কর্মকর্তা উবায়দুল হক জানান, একজন মহিলা তার কাছে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর কয়েকটি বাগানের অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘এরকম কিছু ঘটতে পারে বলে আগেই আমি বারবার সতর্ক করেছি। সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’