কারো কারো সম্পূর্ণ টাকাও গায়েব হয়ে গিয়েছে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা প্রমাণসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলেও মিলছে না প্রতিকার। সমাজসেবা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বলছেন তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
লক্ষ্মী নুনিয়া লুহাউনী চা বাগানের বাংলা টিলার বাসিন্দা। চা বাগানের কাজ করে সংসার চলে। দীর্ঘ চার বছর থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালান। দুই বছর আগে বড় একটি ছেলেও মারা গেছে। তার টাকাও বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি অজিত কৈরী তার মৃত স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে নিয়ে গেছেন।
লক্ষ্মী নুনিয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘লিস্টে নাম ছিল কিন্তু টাকা পাই না। অন্য নাম্বারে গেছে, আমার নম্বর বাদ।’
শুধু লক্ষ্মী নুনিয়া নয় এমন অভিযোগ আরও বেশ কয়েকটি বাগানের লোকদের। শমসেরনগর ও লুহাইউনী চা বাগানের মুক্তা, সুমি রাজভর ও হৃদয় দাসসহ অনেকের। এমনকি গত বছরের টাকাটা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এ বছর জানাজানি হলে বাগানে গন্ডগোল শুরু হয়। এর পর অনেকের টাকাই ফেরত দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শমসেরনগর চা বাগানের বড়লাইন ভুষি টিলার রামা কান্ত যাদবের টাকা চলে যায় বাগান সেক্রেটারি শ্রীকান্ত গোপাল কানুর ছেলে বিকাশ নম্বরে। একই অবস্থা দীপালী ভরেরও।
এ বিষয়ে রামা কান্ত বলেন, ‘টাকাগুলো আমাদের বাগানের প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। বিকাশ নাম্বরগুলো তার একান্ত নিজের ও আত্মীয়দের।’
লুহাইউনি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি ও শমসেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক তাদের দোষ স্বীকার করে বলেন, অনেককেই দিতে হয়েছে সুবিধা তাতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
লুহাইউনি চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটি প্রেসিডেন্ট অজিত কৈরী বলেন, ‘আমার নামে যে অভিযোগ উঠেছে বাস্তবে তা ভুয়া।’
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানালেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা।
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘বিকাশ নম্বর একান্তই ব্যক্তিগত এতে সমাজ সেবা কর্মকর্তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘যদি কোনো অনিয়ম পরিলিক্ষিত হয়। অসামঞ্জস্য পরিলিক্ষিত হয় তাহলে ফৌজদারি মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভোক্তভোগী ও সচেতন মহলের দাবি সমাজ সেবার অ্যাপসটি আপডেট করে সময়য়োপযোগী করতে হবে। যাতে করে এনআইডির সাথে মোবাইল নম্বরের মিল না থাকলে টাকাটা বেহাত না হয়।
এ বছর সমাজ সেবা থেকে চা জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নে ৬ হাজার টাকা করে ৩৫ হাজার ৭০৪ জনের মধ্যে অনুদান দেয়া হবে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার ৬৮৩ জনকে অনুদানের টাকা বিতরণ করা হয়েছে।