এতে অবরোধের মুখে পড়ে প্রশাসনের নির্দেশে বিকল্প সড়কে যেতে শুরু করেছে যানবাহন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রথম উপজেলার ওপর দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন।
পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আল্টিমেটাম শেষে গতকাল (মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর) থেকে টানা দ্বিতীয় দিন সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ করেন। তারা সড়কগুলোর আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নসহ ১০টি এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে এবং তাঁবু টানিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এতে স্থানীয় প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বিকেলে ভাঙ্গা গোলচত্বরের ঢাকা-বরিশাল সড়কে বিক্ষোভকালে স্থানীয় বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক এম এ ওসমান গণি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলবে।’
আগামীকাল থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
পুখুরিয়া এলাকায় হামিরদি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রচমত আলী নির্বাচন কমিশনারকে আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা কষ্ট করছি, হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। একজন স্ট্রোক করে মারা গেছে আর উনি বসে বসে দেখছে- এটা আমরা চাই না। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে আমাদের ফিরিয়ে দেন তাহলে আমরা আন্দোলন করব না।’
এদিকে তৃতীয় দিনে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও ও রেলপথ অবরোধে ঘোষণা দিলেও সেটা করতে ব্যর্থ হয় বিক্ষুব্ধরা। এদিন সকাল থেকেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রাখা হয় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়। প্রবেশ পথে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশকে যৌথভাবে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘এটা স্থানীয়ভাবে সমাধানের বিষয় না, জাতীয়ভাবে এবং আইনগতভাবে সমাধান করতে হবে। এছাড়া কেউ জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে বা চুরি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে এবং দমন করা হবে।’
আরও পড়ুন:
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ৪৬টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করেন। গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর-৪ এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন পাশ্ববর্তী ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এরপরেই ক্ষোভে ফুসে উঠে স্থানীয়রা।
এরপর গত ৭ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না।’
এদিকে যানবাহন চালকদের বিকল্প তিনটি পথে চলতে শুরু করেছে। বরিশাল থেকে ঢাকাগামীরা টেকেরহাট থেকে মাদারীপুর ও শিবচর হয়ে এবং ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী যানবাহন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড় থেকে সদরপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় উঠছেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগে পরিবর্তন এনেছেন।
আরও পড়ুন:
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান জানান- তৃতীয়দিনে অন্যদিনের তুলনায় যানবাহন কম ছিল। এদিন ১০ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহন আটকা পড়ে। এছাড়া পরিবহন মালিক সমিতিদের বিকল্প পথে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়, স্থানীয় এলাকাবাসী আমাদের কাছে স্মারক লিপি দিলে সেটা কমিশনের সচিব বরাবর আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি তার একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
তিনি অবরোধকারীদের প্রসঙ্গে বলেন , ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হলে সমস্যা খুব একটা নেই,তবে কেউ বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’