মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। হাসপাতালের আধুনিক ভবন, শয্যা, জেনারেটর, পানির ট্যাংকি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও সিজার সেবা চালু হয়নি। সরকারি ওষুধ প্রায়শই অপ্রতুল বা ভেজাল। যার কারণে রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিক বা দূরের হাসপাতালে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন। সামান্য চিকিৎসার জন্য গেলেও জেলা শহর হাসপাতালে রেফার করা হয় রোগীদের।
সামাজিক সংগঠন হৃদয়ে কমলগঞ্জে আহবায়ক মো. সোলায়মান উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কার্যকারিতা নেই। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে রোগীরা ন্যায্য স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। এর দায়ভার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল হোসেন বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল জনগণের ভরসাস্থল হওয়া উচিত। অথচ এখানে রোগীরা চিকিৎসক সংকট, ভেজাল ওষুধ, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও প্রশাসনিক অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।’
সাবেক কমলগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্সের কমতি, জরুরি সেবার অপর্যাপ্ততা এবং সিজার সেবা না থাকা, এগুলো সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে ফেলছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ ও প্রশাসনিক তদারকি না হলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হবে।’
আরও পড়ুন:
নিরাপদ চিকিৎসা চাই (কমলগঞ্জ উপজেলা) এর সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যর্থতার কারণে জনগণকে কঠোর আন্দোলনে নামতে হবে।’
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই, কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার আব্দুস সালাম খোকন, স্বপ্নের ঢেউ সমাজকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তুহেল আহমেদ, জুলাই যোদ্ধা ইমাজ উদ্দিন ও মাজহারুল ইসলাম শাফি, জালালিয়া সমাজকল্যাণ পরিষদের সালেহ আহমেদ, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব আহমেদুজ্জামান আলম, নিরাপদ চিকিৎসা চাই, কমলগঞ্জ-এর সদস্য সচিব সৈয়দ এবাদুর হোসেন জেমস, আল ফালাহ সোসাইটির সভাপতি হোসাইন আহমেদ, আপ বাংলাদেশ, মৌলভীবাজার জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আং সামাদ মুন্না, নির্মাণ শ্রমিক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আছমত আলী, তালামিযে ইসলামীয়া পৌর শাখার সভাপতি তৌহীদ আহমেদ, সমাজসেবা ফোরাম, চিতলিয়ার সভাপতি শাহেদ আহমদ, কৃষক দল, কমলগঞ্জ উপজেলার সদস্য সচিব আব্দুল আহাদ, পাত্রখলা ইসলামী যুব সংঘের সভাপতি আমজাম হোসেন, আতিক ফাউন্ডেশনের রাইন আহমেদ রুহিন এবং মোহাম্মদ সুলতান ও লতিফুন্নেছা ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক আল আমিনসহ আরও অনেকে।
বক্তারা একত্রে দাবি করেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে, গাইনী ডাক্তার এনে সিজার সেবা চালু করতে হবে, সরকারি ওষুধ সঠিকভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, হাসপাতালের অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও অপারেশন থিয়েটার সচল রাখতে হবে, জরুরি সেবা কার্যকর করা এবং স্বাস্থ্যসেবাকে দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০টিরও বেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন মানববন্ধনে অংশ নেয়। আয়োজকরা জানান, এ মানববন্ধন কেবল শুরু। যতদিন পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনগণের জন্য নিরাপদ, কার্যকর ও জনবান্ধব না হবে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কমলগঞ্জের চিকিৎসক ডা. এস.কে. নাহিদ। মানববন্ধন ও সভা শেষে নয় দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি সিভিল সার্জন বরাবরে দেয়া হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সর্বস্তরের লোকজন অংশ গ্রহন করেন। নয় দফা দাবিগুলোর মধ্যে হচ্ছে, গাইনী ডাক্তারের সংকট নিরসন, সিজার ও অপারেশন চালু করা, বিসিএস ডাক্তারদের রুম সংকট নিরসন, এক্সরে, ইসিজিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সচল রাখা, হাসপাতালের ল্যাবরেটরী কক্ষ সংস্কার ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ সচল রাখা ও নিয়মিত আপডেট দেয়া, হাসপাতালে সকল প্রকার এন্টিভেনম সরবরাহ করা, হাসপাতালের ঔষধ সংকট নবরসন করা ও হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং হাসপাতালে জেনারেটর সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখা।