৫৪ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি কুমিল্লার বেলতলী বধ্যভূমি

কুমিল্লা
কুমিল্লা বধ্যভূমি
এখন জনপদে
0

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংসতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন। আর সেই জংশনের ছায়াতেই গড়ে ওঠে বেলতলী বধ্যভূমি, তবে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ঐতিহাসিক এ বধ্যভূমি রয়ে গেছে চরম অবহেলায়। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে রেলওয়ে জংশন ও বেলতলী বধ্যভূমির ইতিহাস তুলে ধরতে এটি সংরক্ষণ জরুরি।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও চাঁদপুর রুটের প্রধান কেন্দ্রস্থল লাকসাম রেলওয়ে জংশন। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটিকে একাত্তরে পাক সেনারা পরিণত করেছিল সামরিক ঘাঁটিতে। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের পর যা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’।

এ মিনি ক্যান্টনমেন্টে ট্রেন থামলেই নামানো হতো অস্ত্র, সেনা এবং ধরে আনা মুক্তিকামী জনতাকে। পাশের ফ্যাক্টরি, গুদাম এবং জংশনের লোকোশেড জুড়ে গড়ে তোলা হয় বাঙ্কার, জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র আর নির্যাতনের ঘর। নির্যাতনের পর হত্যা করে রেললাইনের পাশেই ফেলে দেয়া হতো তাদের নিথর দেহ।

লাকসাম মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ও বর্তমান উপজেলা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের কোনো স্মৃতিচিহ্ন লাকসামে নেই এ বধ্যভূমি ছাড়া। এ বধ্যভূমি যেন সংস্কার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।’

এ সব হত্যাযজ্ঞের প্রধান কেন্দ্র ছিল জংশনের বেলতলী। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, প্রায় ১০ হাজার নারী–পুরুষকে হত্যার পর বেলতলীতে মাটি চাপা দেয় পাক বাহিনী।

আরও পড়ুন:

যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, প্রায় ১১ হাজার মানুষয়ে তারা এখানে রেখেছে। এমন বধ্যভূমির চিত্র দেখে হতাশ তারা। আরও সংস্কার করার দাবি জানান তারা।

১৯৯৯ সালে ঢাকার সাংবাদিকদের উদ্যোগে ডোম শ্রীধাম দাস জংশনের দক্ষিণে প্রায় দুই হাজার ফুট এলাকা জুড়ে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করেন মাথার খুলি আর অসংখ্য হাড়–কঙ্কাল। এখন সেগুলো সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জরিপে দেশের দশটি গুরুত্বপূর্ণ বধ্যভূমির মধ্যে একটি বেলতলী। অথচ এ বধ্যভূমি আজও পড়ে আছে অবহেলায়। এখানে নেই কোনো সরকারি সাইনবোর্ড, নেই চিহ্নিতকরণ বা সম্মানের স্মৃতিফলক। ফলে ভূমিটি এখন পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও অপরাধীদের আড্ডাস্থলে। তবে নতুন প্রজন্মের জন্য এটি সংরক্ষণ করা জরুরী বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষকরা।

কুমিল্লা মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক আবুল কাশেম হৃদয় বলেন, ‘লাকসামে বধ্যভূমির মতো অনেকগুলো বধ্যভূমি কুমিল্লা শহরে আছে। সবগুলো এখনো সংরক্ষণ হয়নি কয়েকটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি সবগুলো বধ্যভূমিই সংরক্ষণ করা উচিত।’

কুমিল্লা লাকসাম উপজেলা নির্বাহী নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন এটি। যা কুমিল্লার লাকসামে আছে। এখানে প্রায় ১০ হাজার বাঙালির গণকবর আছে। তাদের স্মৃতি রক্ষায় আমাদের এটি সংরক্ষণ করতে হবে।’

অন্যদিকে রসুলপুর, কটক বাজার, শাকতলাসহ কুমিল্লায় রয়েছে প্রায় ৫০টি বধ্যভূমি। অধিকাংশই পড়ে আছে অযত্নে। বেলতলীও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধারণ করা বেলতলী বধ্যভূমি দ্রুত সংরক্ষণ ও স্মৃতিফলক স্থাপনের দাবি স্থানীয়দের।

এফএস