চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজে আসা গম, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, চিনিসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য বহির্নোঙ্গরে ছোট লাইটারেজ জাহাজে খালাস হয়। পরে সেগুলো নদীপথে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। চট্টগ্রাম থেকে ১৮শ' লাইটারেজ জাহাজ নদীপথে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহন করলেও সম্প্রতি লাইটারেজ জাহাজের সংকট প্রকট হয়ে উঠে।
অসাধু আমদানিকারকরা লাইটারেজ জাহাজকে ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে এই অভিযোগ উঠার পর তৎপর হয় চট্টগ্রাম বন্দর ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তর।
পণ্য লোডের ৭২ ঘণ্টার বেশি বন্দর সীমায় অবস্থান করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিলেও সংকট কাটেনি। মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসে সময় বেশি লাগায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবপক্ষই, বিরূপ প্রভাব পড়ছে পণ্য সরবরাহে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈ য়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘এখন কিন্তু লাইটার পাওয়া যাচ্ছে না। যার জন্য জাহাজের পারফরম্যান্স কমে যাচ্ছে, ওয়েটিং বেড়ে যাচ্ছে। শত শত লাইটার ভেসেল গোডাউন হিসেবে ভাসছে। যেখানে চারটা লাইচার জাহাজ দরকার সেখানে দুটা হলে তার সক্ষমতা অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। এভাবে থাকলে জাহাজের খরচ বাড়বে এবং সামগ্রিকভাবে পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে।’
লাইটারেজ জাহাজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্ণফুলী নদী বা বন্দর চ্যানেলে নয়, গন্তব্যস্থলে বিভিন্ন ঘাটে আমদানিকারকরা লাইটারেজগুলোকে ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এছাড়া মামলার ভয়ে পলাতক ও সাবেক মন্ত্রী এমপি ব্যবসায়ীদের অনেকেই জাহাজ কেটে শিপইয়ার্ডে বিক্রি করে দেয়ায় সংকট বেড়েছে। ফলে ১৮শ থেকে লাইটারেজ জাহাজের সংখ্যা কমে ৯শতে দাঁড়িয়েছে।
জাহাজ মালিক শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আনলোড পয়েন্ট থেকে মূলত পণ্য খালাস হয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ইমপোর্টাররা তাদের জাহাজকে ভাসমান গুদাম হিসেবে রেখে দিয়েছে। আগে ১৮০০ জাহাজ চলতো। এখন ৯০০ কমানো হয়েছে। যার ফলে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে যে ৯০০ জাহাজ রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যদি দ্রুত পণ্য খালাস করা হয় তাহলে এ সংকট থাকবে না।’
এদিকে লাইটার জাহাজের সংকট নিরসনে সাগরে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে কোস্টগার্ড ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তর। গত এক মাসে প্রায় ১ হাজার জাহাজে অভিযান চালানো হয়।
বিসিজিএস সবুজ বাংলার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ১ হাজার ৮৫টি লাইটার জাহাজে আরোহন করেছি। এর মধ্যে যেসব জাহাজে ভোগ্যপণ্য ও ভোজ্যতেল রয়েছে সেগুলো যে ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় না থাকে সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।’
সম্প্রতি পণ্য খালাস না করায় বন্দর ইয়ার্ডেও কন্টেইনার জট দেখা দেয়। সংকট নিরসনে ১০ মার্চ থেকে চারগুণ বাড়তি মাশুল আদায়ের পরিপত্র জারি করে চট্টগ্রাম বন্দর। এ ঘোষণায় কন্টেইনার ডেলিভারি বাড়ায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।