খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার প্রান্তিক চিংড়ি খামারি একরাম হোসেন। ৫ বছর ধরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করছেন চিংড়ি। গেল বছর কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় এবছর বড় বিনিয়োগে চিংড়ি চাষ শুরুর ব্যাপারে রয়েছেন দ্বিধায়।
প্রান্তিক চিংড়ি খামারি একরাম হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এসপিএফ হ্যাচারি আছে ৩টি। এর মধ্যে চালু আছে একটি, বাকি দুটো আমাদের এসপিএফ পোনা দিচ্ছে না। সঙ্গে আমাদের নদী ও সমস্যা। ঠিকমত লবণ পানি পাচ্ছি না।’
একরাম হোসেনের মত একই উপজেলার পঞ্চানন ও মালতী দম্পতি আধা নিবিড় চিংড়ি চাষ করছেন এক দশক ধরে। তারাও ভুগছেন নানা প্রতিবন্ধকতায়। সর্বশেষ মৌসুমে দু’জনের পৃথক ঘেরে মড়ক লেগে পুঁজি হারিয়েছেন অন্তত ১০ লাখ টাকা। নদী-খাল ভরাট ও দখল, পানি ও পোনা না পাওয়া, পুঁজি সংকট, ভাইরাস ও দাবদাহে মড়কের কারণে এই দম্পতির মত অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন চাষ। পাঁচ বছরে ঘেরের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর।
প্রান্তিক চাষি পঞ্চনন ও মালতি জানান, ১ লাখ বাচ্চা দিয়ে ২৪ মণ মাছ পেয়েছি। ৭০ হাজার বাচ্চা দিয়ে ১২ মণ মাছ পেয়েছি। বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা, নদী গুলো ও ভরাট হয়ে গেছে। সরকার তদারকি না করলে খুব সমস্যায় পড়বো আমরা।
উৎপাদন কমায় বড় প্রভাব পড়ছে রপ্তানি বাজারে। গত দশ বছরে খুলনাঞ্চলে চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কমেছে অর্ধশতাধিক। অথচ এক সময় চিংড়ি চাষ হতো এ অঞ্চলের সর্বত্র। উৎপদন কমে যাওয়ায় কমছে রপ্তানি আয়ও।
ঘের মালিক ও চাষিদের মতে, রপ্তানিযোগ্য চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে হলে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো আধা নিবিড় পদ্ধতি। আর ভেনামী চাষ পদ্ধতি এখনও নিরীক্ষণ পর্যায়ে থাকায় তা অনুসরণ করা সময়সাপেক্ষ।
ঘের মালিক ও চাষিরা জানান, হেক্টর প্রতি যেই প্রোডাকশন তাতে আসতে হলে অবশ্যই আধা নিবিড় পদ্ধতিতে আসতে হবে। ওষুধ ঠিকমতো দিতে হবে, খাবার সময়মতো দিতে হবে। তাহলে লসের সম্ভাবনা কম।
এদিকে, রপ্তানিকারকরা বলছেন, উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ণ করতে পারলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
চিংড়ি রপ্তানিকারক এম এ হাসান পান্না বলেন, ‘এখানে ইলেকট্রিসিটির ব্যবহার হয় অনেক। চাষিদের ইলেকট্রিসিটি ও সুদের ব্যাপারে কোন ছাড় না থাকায় প্রোডাকশন কমে যাচ্ছে। আমাদের টার্গেট তো থাকে রপ্তানি। আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে পেরে উঠি না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।’
চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় অল্প খরচে বেশি উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
খুলনা মৎস অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় আমরা যেই চিংড়ী চাষ করছি সেখানে ঘেরের গভীরতা বাড়িয়ে ৪ থেকে ৫ ফিট করা, এবং বায়োসিকিউরিটিসহ খাবার ব্যবস্থাপনা এগুলোতে চিংড়ির উৎপান প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেড়েছে।’
মৎস্য বিভাগের অথ্য অনুযায়ী, খুলনার ৯ উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মিঠা ও লবণ পানি মিলিয়ে চিংড়ি ঘের ছিল ৫৬ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থ বছরে সেই ঘেরের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৯৯ হেক্টরে। এই সময়ের ব্যবধানে উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ৭৫২ টন।