তীব্র গ্যাস সংকটে ৬ মাস ধরে আশুগঞ্জ সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ

আশুগঞ্জ সার কারখানা
এখন জনপদে
অর্থনীতি
0

তীব্র গ্যাস সংকটে ৬ মাস বন্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৪ কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ বিদেশ থেকে সার আমদানির মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্যের জন্য বছরের বেশিরভাগ সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয় কারখানায়। প্রতিবছর সার উৎপাদনে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কারখানাটি।

মেঘনার পূর্বপাড়ে ৫০০ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত আশুগঞ্জ সার কারখানা। চালু হওয়ার প্রথমদিকে দিনে কারখানাটি ১৬ শ’ টন সার উৎপাদন করলেও এখন কোনমতে প্রায় সাড়ে ১১ শ’ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারে কারখানাটি।

গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদিত প্রিলড ইউরিয়া কৃষকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। প্রায় সাড়ে ৭শ’ ডিলারের মাধ্যমে সার পাঠানো হয় আওতাভুক্ত ৭ জেলায়। তবে গেলো কয়েক বছরে সার উৎপাদনে বিসিআইসির দেয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কারখানাটি।

মূলত ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি বছরের বেশিরভাগ সময় গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বন্ধ থাকে ইউরিয়া উৎপাদন। চাহিদার যোগান দেয়া হয় আমদানি করা সার দিয়ে। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে না পেরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সার কারখানাটি।

আশুগঞ্জ সার কারখানায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ইউরিয়া সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৪ হাজার টন ও উৎপাদন ছিলো ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৭ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৮০ হাজার টন ও উৎপাদন ছিলো ৯৬ হাজার ৪৬ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ লাখ টন ও উৎপাদন ছিলো ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ টন ও উৎপাদন ছিলো ৪৮ হাজার ৪৫৩ টন।

আরও পড়ুন:

নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন আর নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেলে আশুগঞ্জ সার কারখানা আবারও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে দাবি উৎপাদন সংশ্লিষ্টদের।

আশুগঞ্জ সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার বলেন, ‘এখনো আমদানিনির্ভরতা রয়ে গেছে। দেশের সার কারখানাগুলো বন্ধ রেখে আমদানির প্রতি তোড়জোড় চলছে। দেশের সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখা মোটেও উচিত হচ্ছে না। এটা জনগণের সম্পদ। একটা নতুন সার কারখানা করতে গেলে ২০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। নতুন কিছু যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে আমরা যদি এ সার কারখানাগুলো চালু করি তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। আমদানি নির্ভরতা কমাবে।’

তবে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুনরায় গ্যাস পাওয়ার আশা করছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।

আশুগঞ্জ সার কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতিটি সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য এরইমধ্যে কমিটি হয়েছে। অর্থ-মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের প্রশ্ন করা হয়েছে। আমরা বলেছি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে গ্যাস দিলে আমরা প্রোডাকশনে যেতে পারবো।’

আশুগঞ্জ সার কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন ৬০০ পিএসআই চাপে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়।

ইএ