ক্যাশলেস লেনদেনে অগ্রগতি ধীর, সরকারের ঘোষণা কতটুকু বাস্তবসম্মত?

ক্যাশলেস বাংলাদেশ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫
ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
1

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে কারসাজি ঠেকাতে নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংক করতে পরিশোধিত মূলধন আগের ১২৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। যার মূলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনে আগ্রহী করা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও ৯০ শতাংশ মানুষ নগদ লেনদেনে বিশ্বাসী।

২০২৭ সালের মধ্যে দেশের লেনদেনের ৭৫ শতাংশ ডিজিটাল করার সরকারি ঘোষণাকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ক্যাশলেস ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অগ্রগতি কম। আর ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়াও বেশ দুর্বল। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ছে। এমন অবস্থায় ক্যাশলেস ব্যবস্থার প্রসারে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধের বিভিন্ন স্তরে ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

আজ (বুধবার, ২৭ আগস্ট) হোটেল সোনারগাঁওয়ে ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০২৫-শীর্ষক সম্মেলনে উঠে আসে খাতটিকে এগিয়ে নিতে নানা পরিকল্পনার কথা। আগামীর বাংলাদেশ ক্যাশলেস বাংলাদেশ বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

ক্যাশলেস ব্যবস্থায় যেকোনো লেনদেনে নগদ টাকার বদলে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার হয়। মোবাইল অ্যাপ, ব্যাংক কার্ড বা কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা যায়। এতে সময় ও ঝামেলা কমে, বাড়ে নিরাপত্তা। অন্যদিকে টাকা ছাপানো, পরিবহন ও বণ্টনে বছরে মোটা অঙ্কের খরচ বাঁচে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে ক্যাশলেস ব্যবস্থা সময়োপযোগী বলছেন বক্তারা। সেই সঙ্গে ক্যাশলেস অর্থনীতি যেন আয়হীন অর্থনীতিতে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তারা।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘মোবাইল সার্ভিসেস বিকাশ, নগদ ইত্যাদি তো আছেই। সেবা গ্রহণকারীরা কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন সে আলোচনাটা বড়ভাবে এখনো আসেনি, কিন্তু এটা প্রয়োজন পড়বে।’

আরও পড়ুন:

যদিও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ও ডিজিটাল ওয়ালেট ক্যাশলেস লেনদেনে অবদান রাখলেও সামগ্রিক অগ্রগতি ধীর বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। খাত সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানিয়েছেন, পেমেন্ট যদি ফিকশনলেস না হয়, তাহলে তার প্রোগ্রেস হবে না। অন বোর্ডিংয়ে এখনো বিশাল সমস্যা।

ক্যাশলেস ব্যবস্থায় রাষ্ট্র লাভবান হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী দিনে ক্যাশলেস লেনদেনকারীদের বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘যাদের ম্যাটারিয়াল ছাড়া অন্যান্য যে সকল খরচ আছে তার ৫০ শতাংশের বেশি যদি ক্যাশ কন্ডিশন হয়, তাহলে আমরা এক্সট্রা একটা অ্যামাউন্ট যোগ করে ট্যাক্স করে দেব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, ডিজিটালাইজেশন বাড়লেও প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ছে। তাই ক্যাশলেস ব্যবস্থা এগিয়ে নিতে বিভিন্ন স্তরে ডিজিটাল পেমেন্ট বাড়ানোর পরামর্শ তার। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্সধারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কিউআর কোড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করানোর পরামর্শ দেন আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, ‘ফোরথ এন্ডে যদি আমার ক্যাশই লাগে, ক্যাশ ইন আবার ব্যাক এন্ডে গিয়ে ক্যাশ আউট তাহলে কীভাবে আমরা ক্যাশ থেকে মুক্তি পাবো? আমাদের ফার্স্ট মাইলেও আবার লাস্ট মাইলেও ক্যাশের ব্যবহারটা কমাতে হবে।’

বিশ্বে ক্যাশলেস সোসাইটির অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে নর্ডিক দেশ সুইডেন, যেখানে মাত্র ১০ শতাংশের কম মানুষ এখন নগদ অর্থ ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানে বহু আগেই ব্যাংক কার্ড ও ডিজিটাল পেমেন্ট জনপ্রিয় গ্রাহকদের কাছে।

ইএ