সবুজ গালিচায় দাঁড়িয়ে থাকা কংক্রিটের আধুনিক সব ভবন দেখে মনে হয়, একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি এটি। তবে ভিতরে ঢুকলেই মোহ কেটে যায়। শিক্ষার্থী আছে, ভবন আছে, তবে নেই কোনো শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমনই অবস্থা ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা এলাকায় অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির।
দেশে সরকারি পর্যায়ের ২৩টি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ময়মনসিংহ আইএইচটি। কোনো রকম জনবল নিয়োগ না দিয়েই ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শুরু হয় শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম।
চারতলা ভবনে রয়েছে অসংখ্য কক্ষ, যদিও নেই আসবাব ও ল্যাব সরঞ্জাম। নিচ তলার একটি কক্ষে পালা করে দু’টি ব্যাচের ক্লাস নেন দু’জন অতিথি শিক্ষক। শিক্ষক না থাকায় বন্ধ প্রথম ব্যাচের ক্লাস, ফ্লোরে ফ্লোরে জমেছে ধুলোবালি।
শিক্ষার্থীরা জানান, অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে তাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ব্যাচের ক্লাস পরিচালনা করা হয়। অন্যদিকে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একটাও ক্লাস করতে পারছেন না। এসময় প্রতিষ্ঠানের একজন প্রধান না থাকার অভাবের কথাও উল্লেখ করেন তারা।
জানা যায়, প্রথম বর্ষের মেয়াদ শেষের পথে থাকলেও তারা এখনো ফলাফল পাননি বলে অভিযোগও করেন অনেকে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মরদেহ দেখা, বোনস দেখা এগুলো তারা পাচ্ছে না। এগুলো এঁকে এঁকে তাদের শেখানো হচ্ছে। সেজন্য ব্যবহারিকে তাদের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। একটা বিষয় সরাসরি দেখা আর এঁকে দেখানোর মধ্যে পার্থক্য তো আছেই।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির দু’টি হোস্টেলে থাকেন প্রায় ১৩০ শিক্ষার্থী। তবে হোস্টেলে কোনো তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় নারী শিক্ষার্থীদের দিন কাটে নিরাপত্তাহীনতায়, ঘটছে চুরির ঘটনাও। প্রতিষ্ঠানের প্রধান না থাকায় শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট সমস্যারও সমাধান মেলে না।
শিক্ষার্থীরা জানান, গেইটগুলোতে নিরাপত্তাকর্মী নেই। এ ছাড়া, হোস্টেলে তাদের প্রয়োজনীয় ডেস্ক, আলমারিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম তারা নিজেরা কিনে ব্যবহার করছেন বলেও জানান তারা।
ময়মনসিংহ আইএইচটির সাবেক প্রধান জানান, প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪৩৫ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর জনবল কাঠামোর প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও অনুমোদন দেয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ জনের।
ময়মনসিংহ আইএইচটি ও সিভিল সার্জনের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘টেকনিক্যাল পড়াশোনার গুরুত্ব রয়েছে। এটা তাদের দরকার আছে। যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাদের দায়িত্বও সরকারের। আমি মনে করি, অচিরেই সরকার এ ব্যাপারে সমাধানের জন্য কাজ করবে।’
আইএইচটির সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মানববন্ধন কর্মসূচি করলেও মিলছে না প্রতিকার। তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান মিলবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
ঢাকা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মিছবাহ উদদীন আহমদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জনবল কাঠামো ও বাজেট বরাদ্দসহ সবকিছু নিয়েই কাজ চলছে। আমাদের সচিব মহোদয় এটা নিয়ে কাজ করছেন।’
ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকর্মীদের তৈরি করার কথা ছিল এই প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু এখানকার শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন থমকে যাবে এই চার দেওয়ালের মাঝেই।