মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদের দাবিতে অনশন কর্মসূচি

টাঙ্গাইল
মাকসু দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি
ক্যাম্পাস
শিক্ষা
0

প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর ছাত্রসংসদের দাবি তুলেছেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে চলছে জোর তৎপরতা। সম্প্রতি অনশনের মতো প্রতীকী কর্মসূচিও পালন করেন তারা। যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন করে জেগেছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন। চলছে কেন্দ্রীয় হল ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এমন অনুকূল পরিবেশে এখন আলোচনায় টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র সংসদ না থাকায় অধিকার থেকে বঞ্চিত তারা।

গেলো ১০ আগস্ট থেকে ছাত্র সংসদের দাবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আক্তারুজ্জামান সাজু। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশন করেন।

আমরণ অনশন করা শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান সাজু বলেন, ‘অনশন কর্মসূচিতে গিয়েছি কারণ আমরা দেখেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তালবাহানা করছে। আমরা বারবার বলেছি জুলাই একটি মীমাংসিত বিষয়। জুলাইয়ের নয় দফা দাবির একটি হলো ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র সংসদ না থাকায় আবাসিক ব্যবস্থাসহ হলের নানা সমস্যার সমাধানে নেয়া হয় না কোনো উদ্যোগ। নেই তেমন খেলাধুলার আয়োজন। অপর্যাপ্ত বই ও অডিটোরিয়াম। সেই সঙ্গে শ্রেণি কক্ষের সংকট। এতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। ছাত্রসংসদ হলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, অনেক সংকট থাকে, ক্লাসরুমের ম্যাটারিয়ালস অনেক সময় পাওয়া যায় না। ছাত্রসংসদ এসব পূরণ করে দিতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে ছাত্রদের অধিকার আদায় প্রতিষ্ঠা কার্যকর করা সম্ভব হবে। প্রশাসন যেন স্বেচ্ছাচারিতা না করতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রেই যেন কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় সেজন্য ছাত্রসংসদ প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা হলে হল দখল, টেন্ডারবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করবে শিক্ষা ও মননশীলতার সুবিন্যস্ত পরিবেশ।

আরও পড়ুন:

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব সাকলাইন আহমেদ সাব্বির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ থাকলে ক্ষমতাসীন দলের স্টুডেন্ট উইং সেখানে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কারণ মাকসুতে বিভিন্ন দল মতের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি সাগর আহমেদ বলেন, ‘মাকসু হলে আশা করি ছাত্রদের প্রতিনিধি আসবে যারা ছাত্রদের নিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষা, নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক চাপ নিরাময়ে কাজ করবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনৈতিক চর্চার জন্য ছাত্র সংসদ প্রয়োজন।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসতিয়াক আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কানুন মেনে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেখানে কল্যাণ হয় সেখানে সকল কিছুকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র ছাত্র পরিচয়ে যারা আসবে তাদের কল্যাণে কাজ করবে এমন একটা গোষ্ঠী অবশ্যই আমার দরকার।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলছেন, শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, প্রভোস্ট ও অফিস প্রধানদের সাথে সভা করা হয়েছে। উচ্চতর কমিটি করে ছাত্র সংসদের বিষয়টি সরকারকে অবগত করা হবে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, ‘আমরা একটি কমিটি করতে যাচ্ছি এবং কমিটি করার প্রসেস এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। আজকের মধ্যেই হয়তো হয়ে যাবে। এরপর সে কমিটি দেখবে আইনের কোথায় দ্বন্দ্ব আছে এবং তা কিভাবে নিরসন করা যায় তা তারা বসে আলোচনা করে সুপারিশ করবেন। সেই সুপারিশ মোতাবেক আমরা ইউজিসি এবং সরকারকে বিষয়টি জানাবো।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১৯ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

ইএ