পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্কতম মরুভূমি চিলির আতাকামা অঞ্চলের কৃষকরা দেখিয়েছেন প্রযুক্তির বাজিমাত। আতাকামার বিরানভূমিতে চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরিসহ নানা ফল। মরুভূমি থেকে শহুরে ছাদ পর্যন্ত পানির ঘাটতি, এবং খাদ্য সংকট মোকাবেলায় চিলির দক্ষতা প্রমাণ করছে হাইড্রোপনিক্স সিস্টেম।
পুরোপুরি কুয়াশা থেকে সংগৃহীত পানিতে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে লেটুস ও লেবুর চাষ করছেন। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে পানির সঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মিশিয়ে সেখানেই গাছ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় মাটির প্রয়োজন পড়ে না।
আটাকামা মরুভূমিতে এই চাষ সম্ভব হচ্ছে ‘ভার্টিক্যাল মেশ ফগ ক্যাচার’ নামে এক ধরনের জালের সাহায্যে। এ জালগুলো এমনভাবে বসানো হয় যাতে করে কুয়াশায় থাকা জলীয় বাষ্পকে ধরতে পারে। তারপর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সে বাষ্প পরিণত হয়ে পানির ফোঁটায়। এভাবে কুয়াশার আর্দ্রতার প্রায় ২ থেকে ১০ শতাংশ সংগ্রহ করা যায়। এরপর তা ট্যাংকে জমিয়ে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়।
পুরো প্রক্রিয়ায় পাম্প কিংবা বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে না। এভাবে প্রতিদিন গড়ে ১০০০–১৪০০ লিটার পর্যন্ত পানি সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে, এমন এক জায়গায় যেখানে প্রাকৃতিকভাবে কোনো পানির উৎসই নেই। এ পানিতে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই। এ পানি ভূগর্ভস্থ পানির চেয়েও বিশুদ্ধ।
এই পাইলট প্রকল্পের জন্য মোট ১.৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল গঠন করেছে চিলি সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি উচ্চমূল্যের, পচনশীল পাতাযুক্ত ফসলের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সর্বোত্তম। তবে এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ চাষি।
ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে খাদ্য ও কৃষি বিজ্ঞান, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন প্রচারের সহযোগিতা সংস্থা (ফন্টেগ্রো) খাদ্য নিরাপত্তা এবং উৎপাদন সম্ভাবনায় হাইড্রোপনিক্সের ভূমিকার উপর জোর দেয়।
চিলির ইউসি আটাকামা ডেজার্ট সেন্টার এরই মাঝে একটি অনলাইন ম্যাপিং প্লাটফর্ম চালু করেছে। কোন কোন অঞ্চলে কুয়াশা পড়ার বেশি সম্ভাবনা আছে তা ম্যাপে দেখানো হচ্ছে। গবেষকদের আশা, পানির সংকটে থাকা এলাকাগুলোয় এ প্রযুক্তি কৃষিখাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।