অ্যাজমা বা হাঁপানি হল শ্বাসযন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া এবং সরু হয়ে যাওয়া দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি অতিরিক্ত শ্লেষ্মাও তৈরি করে। এর কারণে রোগীর শ্বাসগ্রহণের সময় অসুবিধা হয়, শ্বাস নেওয়ার সময় শ্বাসকষ্টের শব্দ হয় এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। এর জন্য কাশিও হয়ে থাকে।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪শ' মিলিয়ন মানুষ এ রোগের শিকার। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি মানুষ হাঁপানির সমস্যায় ভুগছে। এ রোগে এক বছর থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি হয়ে থাকে।
এই রোগের উপসর্গ কী?
হাঁপানি শ্বাসতন্ত্রের একটি সমস্যা যা ৬ মাস বয়সী শিশু থেকে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে হতে পারে । এর মূল উপসর্গগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, ঘনঘন কাশি, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, বুক ভার হয়ে থাকা বা দমবন্ধভাব।
বংশগত সমস্যা, যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা, অ্যালার্জি, সংক্রমণ, ঋতু পরিবর্তন এবং দূষণ ইত্যাদি অনেক কারণই হাঁপানির জন্য দায়ী হতে পারে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, জিনগত কারণও শিশুদের হাঁপানির জন্য দায়ী।
অ্যাজমার কারণ?
ব্যক্তিভেদে হাঁপানির লক্ষণগুলো রাতে বেড়ে যেতে পারে বা ভারি কাজ বা ব্যায়াম বা খেলাধুলা করলেও বেড়ে যেতে পারে। হাঁপানি জিনগত এবং পরিবেশগত কারণে হয় বলে ধারণা করা হয়। পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে আছে বায়ু দূষন এবং বাতাসে এ্যালার্জেন বা এ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদানের উপস্থিতি।
অ্যাজমা শনাক্ত করবেন কীভাবে?
বেশিরভাগ অ্যাজমা রোগীর শৈশব বা অল্প বয়স থেকেই হাঁপানি, অ্যালার্জি, অতি সংবেদনশীলতার ইতিহাস থাকে। এ ধরনের রোগের ইতিহাস থাকে পরিবারেও। কারও যদি হাঁপানির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা ও ইতিহাস বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে বুকের এক্স–রে করানো উচিত। রক্তে অ্যালার্জির মাত্রা, ফেনো, স্পাইরোমেট্রি বা শ্বাসের পরীক্ষা ইত্যাদি করাতে হতে পারে।
যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া জটিল, দ্রুত চলমান এবং উচ্চ তীব্রতা ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একটু অসাবধানতা বা অবহেলা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। শুধু তাই নয়, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।
অ্যাজমা প্রতিরোধে করণীয় কী?
প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, অ্যালার্জি জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, মশার কয়েল, সুগন্ধি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। ওজন অ্যাজমার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়। স্থূল ব্যক্তির পেট বড় হওয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। অ্যালার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সক্ষম।
শিশুদের ক্ষেত্রে করণীয়:
ঘরে মশার কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করা যাবে না। মশারির ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। শীতকালে কম্বল ব্যবহার না করে কভারসহ লেপ ব্যবহার কতে হবে।
এছাড়াও আঁশযুক্ত খেলনা, কার্পেট, কুশন পরিহার করতে হবে। গ্রামের ফসল তোলার সময়টাও হাঁপানির জন্য খারাপ। ফুলের রেণু, ফসলের আঁশ শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত ফল, সবজি শিশুদের জন্য পরিহার করতে হবে।