প্রায় ১২ লাখ মানুষের জেলা বরগুনায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। জেলার মধ্যে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পৌর শহর ও গৌরীচন্না ইউনিয়নকে। শহরের কাঠপট্টি এলাকার প্রতি ঘরেই ২-৩ জন করে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। এরমধ্যেই মারা গেছেন কয়েকজন।
স্থানীয়রা জানান, আমাদের সবার বাসায় ২/৩ জন করে ডেঙ্গু রোগী আছে এখন। আশেপাশের বর্জ্য পরিষ্কার করা হচ্ছে না অনেকদিন ধরে।
গত মে মাসের শেষভাগে নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল। এরপর কয়েকদিন চলে ভারি বর্ষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টিপাত শেষের পর যে তাপপ্রবাহ শুরু হয় সেটি এডিসের বংশবিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. সামসুজ্জোহা বলেন, ‘জলাভূমি গুলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্লাবিত হয়। এই জমে থাকা পানি পরবর্তীতে আমাদের জন্য ময়লার ভাগার এবং একই সাথে এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।’
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা থাকলে নিশ্চিত করে বলা যায় ওই এলাকায় জীবাণুর সংক্রমণ বা বিস্তার ঘটবে। সেখানে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি, লোকজন ও বেশি। এজন্য ওই এলাকার মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’
স্থানীয়রা বলছেন, ‘বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে ৬ মাস আগে থেকেই সতর্ক করলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। ২০২১ সালে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনা পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার চালু হয়নি এখনো। এছাড়া, ডাস্টবিনগুলোও হয়েছে বেদখল।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছে। নদী, খালে ময়লা ফেলছে এর কারণে বেশি করে রোগ ছড়াচ্ছে।
বরগুনা পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘বরগুনা জেলায় কেন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি তা জানার জন্য আমরা আইইডিডিআর বরাবর পত্র পাঠিয়েছি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর জন্য। ঈদের ছুটির পরপরই তারা আসবে, এখানে গবেষণা করে দেখবে কেন এখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট কাটাতে কাজ করছেন তাঁরা।
তিনি বলেন, ‘রোগী জায়গা দিতে পারছি না। আমাদের ধারণক্ষমতার বেশি রোগী এখানে আসছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। আইসিইউ এর ব্যবস্থা এখন হয় নি। আমাদের আইসিইউ ও সিসিইউ এর ঘাটতি রয়েছে। আমরা লিখেছি, বলেছি এগুলো। আশা করি এই সমস্যা সমাধান হবে খুব দ্রুত। যেহেতু, করোনার প্রাদুর্ভাব ও হয়ে যাচ্ছে তাই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
২০১৯ সাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।