শেষ বিকেলের আলোয় বনশ্রী খালে খাবারের সন্ধানে মগ্ন একঝাঁক বক। কেউ ব্যস্ত জলকেলীতে। এ সবকিছু গ্রামীণ জনপদের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তবে খালের দু’ধারে যাদের বসবাস তাদের জীবন মোটেও এমন স্বপ্নের নয় বরং স্বপ্নভঙ্গের। এডিস, কিউলেক্সসহ আরও কয়েক ধরনের মশার উপদ্রবে রাত কিংবা দিন, সব সময় অতিষ্ঠ থাকেন রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরকার থেকে যে স্প্রে করা হয়, তাতে কোনো কাজ হয় না। বাসার ভেতরে বা বাহিরে সবস্থানেই সমান তালে মশা থাকে বলে জানান স্থানীয়রা।
রাজধানীতে মশার আধিপত্য দুই সিটি করপোরেশনেই। নগরীর মশা মারতে কামান দাগা ছাড়া দৃশ্যমান সবকিছুই করেছে নগরকর্তারা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে কীটনাশক ব্যাকটেরিয়া বিটিআই আমদানি সাবেক আমলে মাঝপথেই ভেস্তে যায়। এমনকি ব্যবহার হয়েছে হাল আমলের ড্রোনও। জলাশয়ে ছাড়া হয়েছে হাঁস ও গাপ্পি মাছ। কোনটাই কাজে দেয়নি। বরং বারবারই মানুষের সচেতনতার ওপরই সব ভার দিয়ে পার পেতে চেয়েছেন নগরের হর্তাকর্তারা।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে এডিস মশা নিয়ে জরিপ চালান একদল গবেষক। তাদের জরিপ বলছে, ঢাকার প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে সাত থেকে আটটি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। জরিপে স্বীকৃত পদ্ধতি ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। এ ইনডেক্সের পরিমাণ ২০-এর বেশি হলে আশঙ্কাজনক হিসেবে বিবেচিত হয়। সেখানে ঢাকায় ব্রুটো ইনডেক্সের হার ৫০ থেকে ৬০।
প্রতি প্রজাতির মশা নিয়ন্ত্রণে আলাদা উদ্যোগ না নেয়ার কারণে মশার বংশবিস্তার এমন আশংকাজনক বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবীরুল বাশার।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশাকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে মশার আবাসস্থলকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করতে হবে। কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ করতে ড্রেন, নর্দমা সেটি ধরে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।’
তবে মশা বিস্তারের জন্য ভিন্ন কারণ শোনালেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক। রাজধানীর খাল ও জলাশয়গুলোর গতিপথ পূর্ব থেকে পশ্চিম। আর সড়কগুলোর গতিপথ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। সড়ক ও জলাশয়ের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে শহরের পানি সরতে পারে না। আর জমে থাকা পানিতে জন্মে মশা। এ কারণে মশা নিধনের পরিবর্তে মশা নিয়ন্ত্রণ করেই নগরবাসীর স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করার দাবি সিটি করপোরেশনের।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘প্রকৃতিকে মাথায় না রেখে উন্নয়ন করা হয়েছে। ফলে ড্যামেজ নিয়ন্ত্রণ করতে ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মতে অবশ্য মশক নিধনের সংগ্রামটা ভিন্ন। সরঞ্জামের অভাব না থাকলেও সামাজিক আন্দোলনের ঘাটতি দেখছেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নিশাত পারভীন বলেন, ‘জনগণ জানে সবই, তবে তারা অনুশীলন করে না।’