২০০৭ সালে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন করার পর থেকে নিয়মিতভাবে এই জীবনরক্ষাকারী শল্যচিকিৎসা করে আসছেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। ব্যয়বহুল এ অস্ত্রোপচারে তিনি নিজে কোনো পারিশ্রমিক নেন না। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২২ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।
কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি অকেজো হয়ে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ সীমিত এবং ডায়ালাইসিস অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর জীবন রক্ষা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:
অধ্যাপক কামরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৫ সালে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বোর্ডের মেধাতালিকায় যথাক্রমে ১৫তম ও ১০তম স্থান অর্জন করেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ১৯৯০ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক পান। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস, ২০০০ সালে ইউরোলজিতে এমএস এবং ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৩ সালে বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০০৭ সালে প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০১৪ সালে নিজ উদ্যোগে সিকেডি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সিকেডিতে প্রতিদিন গড়ে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিটি অস্ত্রোপচারে ১০ থেকে ১২ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী যুক্ত থাকেন। বর্তমানে এখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্যাকেজ মূল্য ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা, যার মধ্যে অস্ত্রোপচার, ওষুধ, আইসিইউ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিডনি দাতাকে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন এবং গ্রহীতাকে ৭ থেকে ১০ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘মানুষকে নিখুঁত চিকিৎসা দেয়া আমার দায়িত্ব। কিডনি রোগীদের চিকিৎসার খরচ আমরা হাসপাতালের অন্যান্য আয়ের মাধ্যমে বহন করি। এটি যেকোনো হাসপাতালই করতে পারে এবং এতে লোকসান হয়—এমনটা নয়।’





