দেশের মোট বৈদেশিক জনশক্তির বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানসহ বিশ্বের ১০টি দেশে গত একুশ বছরে ১ কোটির বেশি শ্রমিক পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আর গত একবছরে এ দেশেগুলো গেছেন ১০ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি কর্মী। স্থানীয় কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ অঘোষিতভাবে নতুন শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছে। তবে দক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে এখনো নমনীয় তারা।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা জানান, সৌদি আরবে কাজের মূল্য বেশি। কাজের জন্য আসলে সে দেশের ভাষা জানা জরুরি বলে জানান প্রবাসীরা।
মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ইউরোপের মতো প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার ধরে রাখতে দক্ষ শ্রমিকের যোগান দিচ্ছে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন। বিপরীতে প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিকল্প পন্থায় দেশ ত্যাগের পথ খোঁজেন বাংলাদেশিরা। এতে বিদেশ গিয়ে বিপাকেও পড়েন অনেকে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন প্রবাসী বলেন, ‘দক্ষতা না থাকার কারণে সঠিকভাবে কার্যসম্পাদন না করার কারণে তাদের চাকরীচ্যুত হতে হয়।’
২০টির বেশি খাতে বহির্বিশ্বে কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন দক্ষকর্মী তৈরিতে কাজ করছে, বিএমইটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম।
বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কয়েকটি কক্ষে চলছে পিডিও, হাউসকিপিং, ড্রাইভিং, কোরিয়ান ও জাপানি ভাষা শিক্ষা এবং মেকানিক্যাল প্রশিক্ষণ। সৌদি আরবগামী কর্মীরা দিচ্ছেন তাকামল পরীক্ষা। বিদেশ যেতে আগ্রহীদের জন্য ৩০টির বেশি স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স চালু আছে এখানে।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বিদেশে যাওয়ার জন্য ট্রেনিং করছেন পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল কিছু কোর্সও করেছেন।
মৌখিক ও হাতে কলমে শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিদেশের জীবনযাপন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ওপর প্রশিক্ষণে জোর দিচ্ছেন প্রশিক্ষকরা।
আরও পড়ুন:
প্রশিক্ষকদের একজন বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে কাজ শিখলে তারা বিভিন্ন কোম্পানিতে এবং বিদেশেও চাকরি করতে পারবে।’
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিএমইটির আওতায় পরিচালিত আইএমটি ও টিটিসিসমূহে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ থেকে দেড় লাখ প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বর্তমানে ১১০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু রয়েছে। এতে জাপানিজ, কোরিয়ান, ইংরেজি ও চাইনিজ ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু আছে। নতুন করে যোগ হয়েছে আরবি ভাষা।
ঢাকা বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছয় মাস পরে আমার ৬০০ জন জনবল লাগবে, এ স্ট্যান্ডার্ডে দিতে হলে আমরা এটি দিতে সক্ষম হব। যারা স্কিল ভেরিফিকেশনে সক্ষম হচ্ছেন তারেই শুধুমাত্র যেতে পারছেন।’
অভিযোগ আছে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ কর্মীরা আত্মীয়-স্বজন কিংবা দালালের মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি দেন।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো চলছে দুই দশকের পুরনো ব্যবস্থায়। দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে প্রযুক্তিকে। কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার কথা বলছেন তারা।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ বা কর্মমুখী শিক্ষাকে আমরা যদি বাধ্যতামূলক না করি তাহলে আমাদের পক্ষে দক্ষকর্মী তৈরি করা খুব কঠিন।’





