আধুনিক যেসব ড্রোন দেখা যায় তা কিন্তু রাতারাতি তৈরি হয়নি। ড্রোনের সঙ্গে মিলিটারি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কয়েক যুগ সম্পর্ক রয়েছে। মিলিটারি ব্যবস্থায় যেখানে মানুষের কাছে পৌঁছানো দুর্গম এমন সবস্থানে মনুষ্যবিহীন বিশেষ সুবিধা’র জন্য প্রথম দিকে ড্রোনের চিন্তাভাবনা করা হয়।
ড্রোন প্রযুক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে শুরু হয়। প্রশিক্ষণের জন্য এবং আকাশে টর্পেডো হিসেবে পাইলট বিহীন বিমানের বিকাশ ঘটে। ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়াম অনুসারে, ‘ড্রোন’ শব্দটির উৎপত্তি ১৯৩০-এর দশকে। ডি হ্যাভিল্যান্ড কুইন বি নামে একটি ব্রিটিশ টার্গেট ড্রোন ছিল তাদের। পরবর্তীতে সামরিক বিভাগে ব্যবহারের জন্য ‘ক্লাসিক ক্যামেরা এবং সেন্সরসমৃদ্ধ’ ১ম মিলিটারি ড্রোন তৈরি করা হয়।
আধুনিক প্রযুক্তির উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি ড্রোন নির্মাণ করছে। বর্তমানে গুগল, অ্যামাজনের মতো বড় বড় কোম্পানি পণ্য পরিবহণ, যোগাযোগ রক্ষা, তথ্য পরিবহণসহ নানা কাজে সার্থকতার সঙ্গে ড্রোনকে কাজে লাগাচ্ছে। মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও আজকাল ড্রোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্বে ড্রোনের বাজার ৪-৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের।
বিশ্বের সেরা সামরিক ড্রোনগুলো মানব অপারেটর ছাড়াই নির্ভুল হামলা, গোয়েন্দাগিরি এবং নজরদারিতে এমন ক্ষমতা এনেছে যা অতীতে কখনও সম্ভব হত না। যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা বজায় রাখার জন্য আর্থিকভাবে শক্তিধর দেশগুলো ক্রমাগত ড্রোন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিক ড্রোন নির্মাণের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এরপরই আছে তুর্কি।
সম্প্রতি ডেনমার্কের অ্যালবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী তাদের ব্যাচেলর থিসিস প্রজেক্টে হাইব্রিড ড্রোন নির্মাণ রোবোটিক্স জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এটি এমন একটি রোবট যা আকাশে উড়তেও পারে এবং পানির নিচে সাঁতার কাটতেও সক্ষম। এ হাইব্রিড ড্রোনের ব্যবহারিক সম্ভাবনা বিশাল। অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারযোগ্য। যেমন: সামরিক অভিযান, জলযান ও সাবমেরিন পরিদর্শন, দুর্যোগকালীন উদ্ধার অভিযান, সামুদ্রিক অনুসন্ধান। এসব ক্ষেত্রে হাইব্রিড ড্রোন হতে পারে এক যুগান্তকারী সমাধান।