বিগত দশকে প্রযুক্তি জগতের আলোচিত কিছু অ্যাকুইজিশন

প্রযুক্তি খাতের মার্জার বা অ্যাকুইজিশন
প্রযুক্তি সংবাদ
তথ্য-প্রযুক্তি
0

টেক ওয়ার্ল্ডে মার্জার জিংবা অ্যাকুইজিশন খুবই সাধারণ ঘটনা। যাদের আর্থিক মূল্য মিলিয়ন থেকে বিলিয়নেও ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়। সাম্প্রতিক সময় থেকে বিগত দশকের এমন কিছু অ্যাকুইজিশনের গল্পই জানবো এবার।

মোটা দাগে মার্জার এবং অ্যাকুইজিশন শুনতে এক মনে হলেও বাস্তবে তাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। দুই বা ততোধিক সমধর্মী ও সম পরিধির ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান যখন এক হয়ে নতুন নামে বাজারে আসে তখন তাকে মূলত মার্জার বা বাংলায় একত্রীকরণ বলে। পাশাপাশি এতে জড়িত প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মালিকানাও আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

অপরদিকে যখন বড় কোন প্রতিষ্ঠান সম্ভাবনাময় অপেক্ষাকৃত কোন ছোট প্রতিষ্ঠানের সমস্ত শেয়ার ও সম্পত্তি কিনে নেয় তখন তাকে অ্যাকুইজিশন বা বাংলায় অধিগ্রহণ বলে। টেক ওয়ার্ল্ডে এই মার্জার বা অ্যাকুইজিশন কনট্রাক্ট খুবই সাধারণ ও নৈমিত্তিক ঘটনা।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেবল টিভি নেটওয়ার্ক চার্টার কমিউনিকেশন ব্যক্তি মালিকানাধীন আরেক কেবল টিভি নেটওয়ার্ক কক্স কমিউনিকেশনের সাথে ৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে দুটি বৃহত্তম মার্কিন কেবল এবং ব্রডব্যান্ড অপারেটর একত্রিত হবে। কোম্পানিটির নাম হবে কক্স কমিউনিকেশনস, যেখানে স্পেকট্রামই হবে তার কনজিউমার ব্র্যান্ড।

গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেটের ইতিহাসের ২০০ এর বেশী অধিগ্রহণের মধ্যে সবচেয়ে দামী অধিগ্রহণ ছিল চলতি বছরের মার্চে ক্লাউড সিকিউরিটি স্টার্ট আপ উইজকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করা। এই অধিগ্রহণ ২০২৬ সালে সম্পূর্ণ হবে। এই চুক্তির লক্ষ্য অ্যালফাবেটের ক্লাউড অফারগুলিকে আরো উন্নত করা এবং এর সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

২০১৭ সালে এন্টারটেইনমেন্ট জায়ান্ট দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি, টিভি ও ফিল্মভিত্তিক আরেক এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্সকে ৭১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। এই চুক্তিতে ওয়াল্ট ডিজনি ফক্সের বেশিরভাগ সম্পদ, যার মধ্যে তার ফিল্ম এবং টেলিভিশন স্টুডিওগুলিও অন্তর্ভুক্ত ছিল তা কিনে নেয়। অবশিষ্ট সম্পদ, মূলত এর সংবাদ এবং ক্রীড়া ব্যবসা, ফক্স কর্পোরেশন নামে একটি নতুন কোম্পানিতে একীভূত হয়।

২০২৩ সালে টেক জায়ান্ট ব্রডকম ক্লাউড কম্পিউটিং ও ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজি কোম্পানি ভিএমওয়ারকে প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। যদিও ধারণা করা হয় চুক্তি সম্পন্ন করতে ভিএমওয়ারকে কিনতে ৬১ বিলিয়ন ও ভিএমওয়ারের ঋণ শোধ করতে আরো ৮ বিলিয়ন সর্বমোট ৬৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছিল ব্রডকমকে।

২০২৩ সালে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট পাবলিক গেমিং কোম্পানি অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডকে ৬৯ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। কল অফ ডিউটি, ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফটের মতন আইকনিক গেমের সাবেক মালিক অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড বর্তমানে মাইক্রোসফট গেমিং এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৬ সালে ডেল টেকনোলজিস কর্তৃক ডাটা স্টোরেজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সলিউশন প্রোভাইডার ইএমসি কর্পোরেশনের অধিগ্রহণের মূল্য ছিল ৬৭ বিলিয়ন ডলার। এই অ্যাকুইজিশনে নগদ ও শেয়ারের সমন্বয় ছিল। ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রযুক্তি খাতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণ হিসেবে রয়ে গেছে এ চুক্তিটি।

২০২২ সালে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার অধিগ্রহণ করেন। কেনার পর তিনি টুইটারের নাম বদলে দেন এক্স। পরবর্তীতে তার এআই ফার্ম এক্স এআই এক্সকে অধিগ্রহণ করে নেয়।

২০১৬ সালে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অ্যানালগ, ডিজিটাল ও মিক্সড সিগনাল সেমিকন্ডাক্টর সলিউশন প্রোভাইডার আভাগো টেকনোলজিস টেক জায়ান্ট ব্রডকমকে অধিগ্রহণ করে। এই অ্যাকুইজিশনে নগদ ও শেয়ারের সমন্বয় ছিল। এখনো পর্যন্ত সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে দামী চুক্তি এটি।

২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন আইবিএম ৩৪ বিলিয়ন ডলারে ওপেন সোর্স এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার প্রোভাইডার রেড হ্যাট অধিগ্রহণ করে। এই অধিগ্রহণ আইবিএমের ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসাকে উল্লেখযোগ্য আকারে বৃদ্ধি করেছে এবং এটি এখনো পর্যন্ত সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণ।

২০২৪ সালে নেটওয়ার্ক জায়ান্ট সিসকো ২৮ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে সফটওয়্যার কোম্পানি স্পলাঙ্ককে। এটি সিসকোর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অধিগ্রহণ।

২০২১ সালে ২৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে ক্লাউড বেইজড সফটওয়্যার কোম্পানি সেলস ফোর্স আরেক সফটওয়্যার কোম্পানি স্ল্যাক টেকনোলজিস অধিগ্রহণ করে।

২০১৪ সালে ফেসবুক ১৯ বিলিয়ন ডলারে ম্যাসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করে। যদিও তখন পর্যন্ত মেটা প্লাটফর্মের অস্তিত্ব ছিলনা। বর্তমানে ফেসবুক থেকে শুরু করে হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডস সহ আরো বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশনই এখন মেটা প্লাটফর্মের অধীনে।

এএইচ