দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ১০০ দিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করার পর বিশ্বের অন্তত ২শ দেশের সঙ্গে শুল্কচুক্তি নিয়ে অনেক বড় বড় প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ এর দুই মাসেরও বেশি সময় পর দেখা গেল চীন, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত চুক্তির নিষ্পত্তি করে উঠতে পারেননি এই রিপাবলিকান নেতা।
এরআগে গেল এপ্রিলের শেষে ঢালাওভাবে শুল্ক আরোপ করে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেন ট্রাম্প, তারও মেয়াদ শেষ হয়েছে গেল বুধবার, ৯ জুলাই। এ তালিকা থাকা বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক জোটের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার সুযোগ দিতে ডেডলাইন আবারও পিছিয়ে দিয়েছেন আগস্টের ১ তারিখ পর্যন্ত। প্রশ্ন উঠছে আরোপিত শুল্ক কার্যকরের সময় পিছিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কে কী ধরণের সমঝোতা করতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট?
অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের ১৭তম সম্মেলনে ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা হয়েছে পরোক্ষভাবে। এছাড়াও ইরানের ওপর সামরিক অভিযানের বিষয়েও বিরূপ মন্তব্য এসেছে কয়েকটি ব্রিকস সদস্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে। এর প্রেক্ষিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন মার্কিন মুলুকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো নীতি গ্রহণ করলে জোটের সদস্যরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ব্রিকসের এই জোটের বর্ধিত সদস্যের তালিকায় আছে ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইরান, ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ফলে, অর্থনৈতিক এই জোটের সঙ্গে সমঝোতায় না আসলে শুল্কযুদ্ধে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না ট্রাম্প। আর সঙ্গে যোগ হবে ডলারের বিকল্প ব্রিকস মুদ্রার চালু নিয়ে ওয়াশিংটনের অসন্তোষ।
তবে এরইমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় বসার আভাস দিয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। তবে অটোমোবাইল খাতে আমদানি শুল্ক নিয়ে আপোষ করতে রাজি হলেও কৃষিখাতে কোনো ধরনের ছাড় দিতে চায় না জাপান। আর দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যের ওপর আরোপ করা ৩০ শতাংশ শুল্ককে ট্রাম্পের একতরফা রাজনীতি হিসেবে বিবেচনা করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে, শুল্ক আলোচনায় ট্রাম্পের এই ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কর ছাড় ও সরকারি ব্যয় কমানোর বিল পাশ নিয়ে বিলম্বের বিষয়টিও। এই বিগ বিউটিফুল বিল নিয়ে বারবার বাধার সম্মুখীন হওয়ায় শুল্ক আলোচনায় দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
হোয়াইট হাউসের সাবেক আইনসভা পরিচালক মার্ক সর্ট বলেন, ‘বাণিজ্য ও শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা কম হওয়াটা ট্রাম্পের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত। কারণ কর ছাড় ও ব্যয় হ্রাস বিলে সাফল্য পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে মাথা ঘামাননি। এখন তিনি তার এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হতে পারবেন। ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলের চেয়ে এবারের পদক্ষেপগুলো আলাদা হবে- তা আমি আগেও বলেছি।’
এখনও পর্যন্ত যে ২১টি দেশের সরকারের প্রধানের কাছে নতুন শুল্কারোপের চিঠি পাঠিয়েছেন ট্রাম্প সেই দেশগুলোর প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে অথবা আলোচনার প্রস্তাব রেখেছে।
এ তালিকায় আছে বাংলাদেশ, কাজাখস্তান, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, তিউনেশিয়া, বসনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সার্বিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড। এই চিঠি দেয়ার উদ্দেশ্যে মূলত এইসব দেশকে শুল্ক বিষয়ক আলোচনার আহ্বান জানানো- বলছে মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন।