রক্তের বদলে রক্ত, হুঙ্কার সিরিয়ার সশস্ত্র বেদুঈনদের। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তাদের।
তারা বলেন, আমরা কোনো আদেশ মানতে বাধ্য না। এটা জাতিগত সমস্যা। ওরা নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, শিশু আর বৃদ্ধদের গলা কাটছে। নিজেদের অধিকার আদায়ের আগে ফিরবো না। রক্তের বদলে রক্ত, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আমরা আইন মেনে চলছিলাম, রাষ্ট্রের কাছে নতি স্বীকার করেছিলাম। এরপরও তারা কী চায় আমরা জানি না। তারা ঘৃণায় পূর্ণ। তাদের বেশিরভাগই বিগত সরকারের কর্মকর্তা এবং ইসরাইলি গোয়েন্দাদের চর।
অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার অস্ত্র বিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও শনিবার সন্ধ্যা থেকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ফের উসকে ওঠে সিরিয়ার দক্ষিণে সোয়েইদায়, সংখ্যালঘু দ্রুজ অধ্যুষিত অঞ্চলে। রক্তক্ষয়ী, প্রাণঘাতী সংঘাতের সপ্তাহ পেরোলেও অস্ত্র বিরতি কার্যকরে হিমশিম খাচ্ছিল সুন্নি ইসলামপন্থী শারা সরকার। শহরজুড়ে সিরীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলেও সোয়েইদার ভেতরে-বাইরে রোববার ভোরেও অব্যাহত ছিল গোলাগুলি ও বোমাবর্ষণ। তবে এরপর নেমে আসে শুনশান নীরবতা। সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যেই সোয়েইদা থেকে সশস্ত্র বেদুঈনদের সরিয়ে নেয়ার কথা জানায় দামেস্ক।
গত ডিসেম্বরে কয়েক দশকের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে উৎখাতের পর প্রেসিডেন্ট শারার ইসলামপন্থী অধ্যুষিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে সবশেষ চ্যালেঞ্জ এই দ্রুজ-বেদুঈন সংঘাত। সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, ইসরাইলের দখলকৃত গোলান উপত্যকা আর লেবানন ও জর্ডানের অংশবিশেষে বাস ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধিবাসী দ্রুজদের। সিরিয়ার বেদুঈন আদিবাসীদের সাথে দ্রুজদের সংঘাতের শুরু গেলো সপ্তাহে। এ পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক মানুষের প্রাণ গেছে সংঘাতে, জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের। এ অবস্থায় শান্তি রক্ষায় অস্ত্র বিরতির প্রতি সব পক্ষকে শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানান শারা।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘বীরোচিত ভূমিকার জন্য আদিবাসীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তবে লড়াই বন্ধে পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে তাদের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। সকলকে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে অনুরোধ করছি। যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা থেকে বের হতে সকলের ঐক্য আর পূর্ণ সহযোগিতা জরুরি।’
এর আগে আরব ও মার্কিন মধ্যস্থতায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে শারার ঘোষণার পরপরই নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। উত্তেজনার আঁচ প্রতিবেশী ইসরাইলেও পৌঁছে যাওয়ায় সিরিয়ার দক্ষিণে, এমনকি রাজধানী দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় লক্ষ্য করেও বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। ইসরাইলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে দ্রুজদের রক্ষায় এ হামলা, দাবি তেল আবিবের। সংঘাতে সিরীয় প্রেসিডেন্ট সশস্ত্র বেদুঈনদের মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর। সোয়েইদা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ওয়ালঘাসহ নিকটবর্তী অন্যান্য এলাকাতেও অবস্থান নেন সশস্ত্র বেদুঈনরা।
বেদুঈনরা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। শপথ করে বলছি, সিরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সোয়েইদা ছাড়বো না আমরা। সোয়েইদায় আমাদের মানুষ, নিরস্ত্র দ্রুজ বা নারী-শিশু-বৃদ্ধদের সাথে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সমস্যা নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর প্রতি যারা বেদুঈনদের আশ্রয় কেড়ে নিয়েছে। তাদের মুখোমুখি হবো আমরা। সোয়েইদা আমাদের কবরস্থানে পরিণত হলেও আমরা সরছি না।’
তবে এ বিষয়ে মত বিভেদ স্পষ্ট ইসরাইল ও দেশটির ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের। সকল নাগরিকের পক্ষে শাসনব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেয়া শারা সরকারের অধীনে কেন্দ্রীভূত সিরিয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে শারা সরকারের বড় অংশই জিহাদি এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি হুমকি বলে মনে করে ইসরাইল।
এর আগে গত মার্চে সংখ্যালঘু আলাউইত সম্প্রদায়ের দেড় হাজার মানুষ জাতিগত হত্যার শিকার হয়; যে হত্যাকাণ্ডে সিরিয়ার সেনাবাহিনীও জড়িত ছিল বলে বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।