সাগর, নদী কিংবা জলাশয় নয়; বাতাসের আর্দ্রতাকে হাইড্রেশনে রূপান্তর করে উৎপাদন হচ্ছে সুপেয় পানি। জ্বালানি শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মরুর দেশ আমিরাতের প্রতিষ্ঠান এমএ হাওয়া।
আবুধাবিতে ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কারখানাটি। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার লিটার পানি সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
এমএ হাওয়া গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল রুটম্যান বলেন, ‘আমরা পানির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটিতে বাস করছি। আমাদের এমন একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যা পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে সাহায্য করবে। তারপর মনে হলো যে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম পানি সম্পদ বা বায়ুমণ্ডল ব্যবহার করতে পারি।’
কারখানা ছাড়াও বাতাসের আর্দ্রতা থেকে পানি উৎপাদনে রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বিশেষ ফিল্টার মেশিন। জেনি নামের এ যন্ত্রটি ছোট হওয়ায় বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসে ব্যবহার করা যায়। প্রতি কিলোওয়াট শক্তিতে একটি মেশিনে পাঁচ লিটার পর্যন্ত পানি উৎপাদন সম্ভব।
আরও পড়ুন:
প্রতি বছর একটি ফিল্টার মেশিনের মাধ্যমে প্রায় ১১ হাজার লিটার পানি উৎপাদন হয়। যার মাধ্যমে ৪৫ হাজার প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার কমানো সম্ভব হচ্ছে। এমনকি এতে সাড়ে ৪ হাজার কিলোগ্রাম কার্বন নির্গমনও কমানো যাচ্ছে বলেও দাবি প্রতিষ্ঠানটির। তাই সম্ভাবনাময় এই খাতে উৎপাদ সক্ষমতা আরও বাড়াতে চলছে গবেষণা।
এমএ হাওয়া গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর আম্রো আসমায়েল বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী বড় যন্ত্রটির নাম হবে জিন-এম প্রো। এটি হবে আসলে আমাদের কাছে থাকা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া যন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি। এটি প্রতি ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৯০০ লিটার পানি উৎপন্ন করবে। তাই এ যন্ত্রটি কৃষি বা যে কোনও শিল্প ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা যাবে।’
এমএ হাওয়া প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় উৎপাদিত ২৫০ মিলিগ্রামের বোতলজাত পানির খুচরা মূল্য ৩.৭৯ দিরহাম বা প্রায় এক মার্কিন ডলার। যা দেশটির অন্যান্য পানি ব্র্যান্ডের তুলনায় বেশি। তবে এটি মরুভূমিতে পানি উৎপাদনের জন্য টেকসই প্রক্রিয়া বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিরাপদ পানি বিশেষজ্ঞ ড. পেং ওয়াং বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলীয় পানি সংগ্রহ যদি সৌরশক্তি দ্বারা চালিত হয়, তবে এটি একটি টেকসই প্রক্রিয়া। কিন্তু এর মধ্যে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তা হলো পানি উৎপাদন হার কম। পাশাপাশি অনেক বড় জায়গার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই মানুষ বিশ্বাস করে যে এই প্রক্রিয়াটি ছোট সম্প্রদায়ের পনি সরবরাহের জন্য উপযুক্ত।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের মতে, দেশটি সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে সুপেয় পানিতে রূপান্তর করার জন্য ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।