ভয়াবহ দূষণের মুখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন নদী, মিশছে বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতু

মিয়ানমারের ইরাবতী নদী
বিদেশে এখন
1

ভয়াবহ দূষণের মুখে পড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূখণ্ড জুড়ে প্রবাহিত নদী। সায়ানাইড, পারদ, আর্সেনিকসহ বিভিন্ন ভারী ধাতু এখন সরাসরি অঞ্চলটির নদীতে মিশে যাচ্ছে। বহু বছর ধরেই মিয়ানমারের ইরাবতী নদীর দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে স্থানীয় সংগঠন ও নদী-পাড়ের সম্প্রদায়। ২০২৫ সালের এক পরীক্ষা দেখা গেছে নদীর পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি।


জীবনের বেশিরভাগ সময় উত্তর থাইল্যান্ডের কোক নদীর পানি দিয়ে তার জমিতে সেচ দিয়েছেন ৫৯ বছর বয়সী কৃষক টিপ কামলু। প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্য দিয়ে বয়ে মেকং নদীর সঙ্গে মিশেছে নদীটি।

হঠাৎই গেল এপ্রিল মাস থেকে কোক নদীর পানি ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বাসিন্দাদের সতর্ক করা শুরু হয়। এরপর থেকে ওই কৃষক সবজি চাষের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করছেন।

এক কৃষক বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমার অর্ধেকটা মরে গেছে। যখন নদী এমন হয়ে গেল, তখন আমরা ফসলে পানি দেবার জন্য বা অন্য কিছুর জন্য নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছিলাম না। যদি আমরা নদীর পানি সবজিতে ব্যবহার করি, তাহলে মানুষ সেগুলো কিনবে না। কোক নদীর তীরবর্তী কৃষকরা এখন চাইছেন নদী আবার তার আগের রূপ ফিরে পাক ‘

আরেক অধিবাসী বলেন, ‘আমি শুধু চাই কোক নদী আগের মতোই থাকুক — যেখানে আমরা এর পানি খেতে পারব, গোসল করতে পারব, খেলতে পারব এবং কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারব।’

সোমবার প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাংক স্টিমসন সেন্টার-এর গবেষণা অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ড জুড়ে ২ হাজার ৪০০ টিরও বেশি খনি, যার মধ্যে অনেকগুলো অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিত। এগুলো থেকেই নদীর পানিতে সায়ানাইড এবং পারদের মতো মারাত্মক রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ছে।

স্টিমসন-এর সিনিয়র ফেলো ব্রায়ান আইলার বলেন, ‘কোক নদীতে মাত্র দুটি বিরল মাটির খনির দূষণ মিশতো। বিরল মাটির খনিগুলি মায়ানমারে ছিল। নদীটি থাইল্যান্ডে প্রবাহিত হয় এবং তারপর এটি মেকংয়ে প্রবাহিত হয়। নদীটি এখন ব্যবহারের অযোগ্য। গবেষণা অনুযায়ী মেকং, সালউইন, ইরাবতী এবং ভিয়েতনামের নদীগুলির মতো প্রধান নদীর অসংখ্য উপনদী রয়েছে যা সম্ভবত অত্যন্ত দূষিত।’

পূর্ব মিয়ানমারে চীন সমর্থিত নতুন বিরল মৃত্তিকা খনি গড়ে ওঠার ফলে গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে থা টন-এর মতো এলাকায়, কোক নদীর নিম্নভাগে দূষণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

থাইল্যান্ডের সরকারি গবেষণা সংস্থা 'থাইল্যান্ড সায়েন্স রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন'-এর তথ্যানুযায়ী, কোক নদীর নমুনায় দূষণের ধরণে ডিসপ্রোসিয়াম এবং টারবিয়ামের মতো ভারী বিরল মৃত্তিকার পাশাপাশি, আর্সেনিকের উপস্থিতিও দেখা গেছে।

মায়ানমার বিশ্বের বৃহত্তম ভারী বিরল মাটির উৎপাদক দেশের মধ্যে একটি। গুরুত্বপূর্ণ এই খনিজ পদার্থ চুম্বকের সাথে মেশানো হয়, যা টারবাইন, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালাতে সাহায্য করে। মায়ানমারের খনি থেকে ওই মাটি কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণের জন্য চীনে পাঠানো হয়। চীন এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উৎপাদন একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

উত্তরের থা টনে কোক নদীর উপর একটি সেতুতে সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। যেখানে উজানে বিরল মাটির খনি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এভাবেই এলাকাটির কৃষক ও সাধারণ বাসিন্দারা নদী দূষণের সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছে।

এএইচ