৯ আগস্ট, ১৯৪৫ সাল। ৮০ বছর আগে এ দিনে জাপানের নাগাসাকিতে ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে ১০ হাজার পাউন্ডের ‘প্লুটোনিয়াম-টু থ্রি নাইন’ বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। চোখের পলকে শহরটির প্রায় ২৭ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ভয়াল এ দিনটিকে স্মরণ করছে জাপানের মানুষ। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নাগাসাকির স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। প্রত্যাশা হলো পৃথিবীর বুকে যেন আর কোনো দিন হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো দিনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এছাড়াও বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করার কথা জানান তিনি।
শিগেরু ইশিবা বলেন, ‘যুদ্ধে পারমাণবিক হামলার একমাত্র দেশ জাপান। তাই বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের হাত থেকে মুক্ত করার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেই যাত্রা অব্যাহত রেখেছি আমরা।’
৮০ বছর পরও হিরোশিমা-নাগাসাকির সাধারণ মানুষের প্রার্থনা বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হোক পারমাণবিক অস্ত্র।
জাপানের বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর না ঘটুক, এটাই একমাত্র চাওয়া। বছর ঘুরে যখন এই দিনটি আসে তখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে এ বিষয়টি আলোচনা করি যেন পৃথিবী সুন্দর ও শান্তির পথে চলে।’
অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘৮০ বছর পার হয়েও গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র এখনও বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। বাস্তব ঘটনা হলো সাধারণ মানুষই বুঝতে পারে যুদ্ধ ও সংঘাতের ভয়াবহতা কতটুকু। তবে রাজনীতিবিদ ও বিশ্ব নেতারা এর যন্ত্রণা কখনও অনুভব করতে পারে না।’
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইল-মোট নয়টি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বর্তমানে। বিশ্ব রাজনীতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের ভূমিকা দেখলেই বোঝা যায় হিরোশিমার সেই শিক্ষা পুরোটাই ভুলে গেছে বিশ্ব। প্রভাবশালী দেশগুলো এখনও একে অপরকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। উত্তর কোরিয়া একের পর এক নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে রহস্যের তৈরি করছে। চীন বাড়াচ্ছে তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা।
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন ১২ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে। তবে আতঙ্কের বিষয় হলো এ অস্ত্রগুলো এখন কেবল আত্মরক্ষার জন্য নয় বরং আক্রমণে ব্যবহারের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র আজও এই বোমা হামলার জন্য সরকারি ক্ষমা চায়নি। তবে প্রায় ৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতিনিধিও এ স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত ছিলো রুশ প্রতিনিধিরাও।