নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী; কে এই সুশীলা কার্কি?

নেপালের অন্তর্বর্তী ও প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি
এশিয়া
বিদেশে এখন
1

নেপালের অশান্ত রাজনৈতিক অঙ্গণে শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি এখন দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী। জেন-জি শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবে সায় দিয়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেপালের শাসনভার গ্রহণ করেছেন তিনি। কে এই সুশীলা কার্কি?

গতকাল (শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুর রাষ্ট্রপতি ভবনে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দেশটির ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তিনি।

রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও কার্কি সবচেয়ে বেশি পরিচিত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে। ২০১৬ থেকে ২০১৭—অল্প সময়ের সেই দায়িত্বকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন নীতির কারণে রাতারাতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীরা তাকেই অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব করেন। অবশেষে প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান ও আন্দোলনকারী জেন-জি শিক্ষার্থীদের সমঝোতায় তার নামেই পড়ে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর সীলমোহর।

১৯৫২ সালে পূর্ব নেপালের এক কৃষক পরিবারে জন্ম সুশীলা কার্কির। সাত ভাইবোনের মধ্যে বড় তিনি। ১৯৭২ সালে মহেন্দ্র মরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কার্কি। এরপর ১৯৭৫ সালে ভারতের বারাণসীর বানারাস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন।

১৯৭৯ সাল থেকে বিরাটনগরে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ১৯৮৫ সালে মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। ২০০৯ সালে তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এক বছর পর হন স্থায়ী বিচারপতি। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তিনি প্রধান বিচারপতি পদে উন্নীত হন।

আরও পড়ুন:

তবে ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাকে ঘিরে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন সংসদ সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনেন। অভিযোগ ছিল, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রধানকে অযোগ্য ঘোষণা করার রায়ে তিনি পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এ প্রস্তাবের কারণে সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থগিত করা হয়।

কিন্তু সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট নিজেই হস্তক্ষেপ করে সে প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অভিশংসনের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয় এবং কার্কি পুনরায় দায়িত্বে ফিরে আসেন।

নেপালের সাম্প্রতিক সহিংস বিক্ষোভে পদত্যাগে বাধ্য হন কে.পি. শর্মা ওলি। আর বিচার বিভাগের প্রথম নারী প্রধান থেকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কার্কি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানই তাকে এনে দিয়েছে জনআস্থা। এবার দেখার পালা, অন্তর্বর্তী সরকারে সেই আস্থাকে কতটা ধরে রাখতে পারেন তিনি।

এসএস