চব্বিশের ১ আগস্ট (গণঅভ্যুত্থান ক্যালেন্ডারে ৩২ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির আলোকে কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান ও হলিডে মোড় এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন শহরের বাস টার্মিনালে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা কর্মসূচি পালন করেন।
পরে সেখান থেকে তারা শহরের প্রবেশদ্বার লিংক রোডে যান। সেখানে তাদের কর্মসূচি চলে। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নেয় অভিভাবক ও সাধারণ মানুষজন।
এর আগে কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নগ্নভাবে ব্যবহার, সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই খুন কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছ ‘, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’, ‘বায়ান্নের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো কক্সবাজারের রাজপথ।
বিক্ষোভের একপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টিমকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল ও লিংকরোডে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা আয়ুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এক মেয়ে দুই ছেলে সন্তানকে শুরুতে আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করেও আটকাতে পারিনি। এমনকি শেষ পর্যন্ত ১ আগস্ট আমি নিজেও তাদের সাথে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নিই। কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেছি। তখন পরিবেশটা এমন হয়েছিল, স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে ঘরে বসে থাকাটা পাপ মনে করেছি।’
জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা আন্দোলনের শুরুতে কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ১৬ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মিছিল করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের লিংকরোড এলাকায় অবস্থান নেয় কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
এরপর থেকে পর্যটন শহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় ১ আগস্ট পর্যন্ত পৃথক সাতটি মামলায় ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় কক্সবাজারে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০ জনকে।
কক্সবাজার পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী মুরাদ হাসান বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু থেকে বাবার উৎসাহে আমরা দুই ভাই আন্দোলনে যোগ দেই। মিছিল শেষ করে বাসায় গিয়ে দেখি বাবা আমাদের জন্য গ্লাসে শরবত নিয়ে বসে আছেন। ১ আগস্ট বিকেলে শেষ পর্যন্ত বাবা নিজেই আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন।’
কক্সবাজার সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচারসহ নয় দফা দাবিতে সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, তখন কক্সবাজারে বিশেষ করে শহর এবং শহরতলীতে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন অধিকাংশ অভিভাবক। আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে দলীয় পরিচয় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।’