গুমের অভিযোগগুলো তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
দেশে এখন
0

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই গুম বিষয়ক কমিশন গঠন করেছে। যাতে বিগত সরকারের আমলে গুম হওয়া অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা যায়।

আজ (শনিবার, ৩০ আগস্ট) ঢাকার একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে ‘রাউন্ডটেবল ডিসকাশন: অন দ্য রোড টু একাউন্টেবিলিটি: কমেমোরেটিং দ্য ডে ফর দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সমেন্ট ডিজঅ্যাপেয়ারেন্টস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, এছাড়াও সরকার জাতিসংঘের (ইউএন) সাথে গুম সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যাতে এই ধরনের গুমের ঘটনা দেশে আর না ঘটে। আমাদের গর্ব ও প্রত্যাশার জায়গা হচ্ছে, গুম কমিশন যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারও চেষ্টা করছে এই বিষয়ে ‘একাউন্টিবিলি মেকানিজম’ প্রতিষ্ঠা করতে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন গুমের শিকার না হয়।

গুম সংক্রান্ত কমিশন ও জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের ঢাকা অফিস যৌথভাবে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে।

ড. আসিফ বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা প্রায় ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের পর বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার এবং অংশীজন আমাদের জানালেন, এসব মামলায় সত্যিকারের কিছু জঙ্গি ও সন্ত্রাসী রয়েছে। এব্যাপারে আমি নাবিলাকে (গুম কমিশনের সদস্য) বলেছি, জঙ্গি বা সন্ত্রাসী নয়, এমন কেউ যদি হয়রানিমূলক মামলায় অভিযুক্ত হন, তাদের বিষয়ে কনক্রিট প্রমাণ থাকলে আইন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসলে সেটা দ্রুত সমাধান করা হবে।’

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুল রহমান খান বলেন, গুমের সব এভিডেন্স থাকার পরও বিভিন্ন বাঁধার কারণে আমাদের এখনো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গুম কমিশন ইতোমধ্যে দু’টি রিপোর্ট দিয়েছে। এই দু’টি রিপোর্ট দেয়া মানে কমিশনের কাজ শেষ হয়ে গেছে তা নয়।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছে কিন্তু এবারের সাড়ে ১৫ বছরের লড়াইটা ছিল অনেক দীর্ঘ এবং ভয়াবহ। পরিণতি ৩৬ দিনে আসলেও এর পিছনে হাজার হাজার মানুষের রক্ত এবং তাদের ভয়াবহ নির্যাতনের ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা বিগত সরকারের নির্যাতনের ডিটেনশন সেন্টার, আয়নাঘর গুলো যদি মিউজিয়াম হিসেবে রক্ষা করতে পারি, তাহলে তা আগামী প্রজন্মের জন্য স্বৈরাচারের ইতিহাসের চিহ্নিত অংশ হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে যারা নির্যাতিত, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল তাদের বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার হাইকমিশন (ওএইচসিএইচআর) ঢাকার মিশন এবং গুম কমিশনের যৌথ উদ্যোগ সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়ে যাবেন বলে আশা পোষণ করি। যে সকল ভিকটিম এখনো মামলা টেনে বেড়াচ্ছেন তাদের বিষয়টি অবশ্যই সরকার দেখবে বলেও জানান তিনি।

গুম সংক্রান্ত কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইইডির সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এই প্রবন্ধে কীভাবে গুম করা হতো, কতজন গুম হয়েছে, গুমের পর কোথায় রাখা হতো, কি ধরনের মামলা দেয়া হতো, ৫ আগস্টের পর গুমের স্থান বা আলামত কীভাবে নষ্ট করা হয়েছে তা উপস্থাপন করা হয়।

গুমের শিকার মাইকেল চাকমা অনুষ্ঠানে বলেন, গুমের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গোপন কারাগারগুলোকে গুম কমিশনের হেফাজতে নিয়ে মিউজিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। যাতে জনগণ এবং বিশ্ব জানতে পারে গুমের ভয়াবহতা এবং কীভাবে এখানে মানুষকে অমানবিকভাবে নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছিল।

গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, গুম সংক্রান্ত কমিশনের সদস্য, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা।—বাসস

এএইচ