ধারণক্ষমতা শেষ হলেও ব্যবহার হচ্ছে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল, হুমকির মুখে পরিবেশ

৯০ ফিট উপরে উঠে ফেলতে হচ্ছে ময়লা
পরিবেশ ও জলবায়ু
বিশেষ প্রতিবেদন
0

২০১৭ সালেই শেষ হয়েছে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের ধারণক্ষমতা। কিন্তু ৮ বছর পার হলেও এখনো সেখানে বর্জ্য ফেলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ ল্যান্ডফিলে বর্জ্যের উচ্চতা ৩০ ফুট পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও এখন সেখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ৯০ ফুট উচ্চতায়। এতে একদিকে যেমন বর্জ্যের গাড়িচালকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে অতিরিক্ত বর্জ্যে হুমকির মুখে চারপাশের পরিবেশ।

বর্জ্য নিয়ে একের পর এক গাড়ি ঢুকছে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে। বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন বা এসটিএস হয়ে সবশেষে এসে জমা হয় আমিনবাজারের এ ভাগাড়ে।

প্রতিদিন আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে বর্জ্যের গাড়ি আসে ৭০০ থেকে ৮০০টি। এর মধ্যে ডিএনসিসির নিজস্ব গাড়ি ৫০০টির বেশি। আর বাকিগুলো প্রাইভেট গাড়ি। একেকটি প্রাইভেট বর্জ্যের গাড়ি গড়ে ১০ টন করে বর্জ্য পরিবহন করে।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব গাড়িতে এই বর্জ্যের পরিমাণ থাকে ৩ থেকে ৪ গুণ। শঙ্কার বিষয় হলো, আগে এ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিয়ে গাড়িগুলো ৩০ ফুট উচ্চতায় উঠলেও এখন উঠতে হয় ৯০ ফুট উপরে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

এক চালক জানান, প্রতিদিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। তখন অন্য গাড়ি তাদের সহযোগিতা করে। আরেকজন জানান, রাস্তার কারণে হয়, বা অনেক সময় চাকার নীচে পলিথিন বা ময়লা পড়লে পিছলে যায়।

দুর্ঘটনার বিষয়ে অবগত ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক। জানালেন, নতুন করে ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩০ একর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের। আর বাকি ৫০ একর ল্যান্ডফিলের জন্য। তবে নতুন করে অধিগ্রহণ করা জমিতে বর্জ্য ফেলা যাবে ২০২৬ সালের শেষের দিকে।

ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমডোর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, ‘২০১৭ এর পর আজকে ৮ বছর অতিরিক্ত সময় ধরে চলছে। এখানে আমরা ধারণা করেছিলাম বর্জ্য হয়ত ৩০ থেকে ৩৫ ফিট পর্যন্ত উচ্চতা হবে। আজ থেকে ১৫-২০ দিন আগে আমরা এখানে একটা টপগ্রাফি সার্ভে করেছি। ওখানে আমরা ওটার এক্স্যাক্ট হাইট পেয়েছি ৯০ ফিট। সেকেন্ড ল্যান্ডফিলটা শেষ হতে হতে ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। তার মানে আমাদের বর্তমান যে ল্যান্ডফিল সেটাকে কোনোভাবে ম্যানেজ করে এন্ড অব ২৬ পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে।’

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৩ গুণ উচ্চতায় বর্জ্য ফেলায় আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের আশপাশের প্রাণ-প্রকৃতিতেও প্রভাব পড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে ল্যান্ডফিল থেকে নির্গত গ্যাস। যার মধ্যে মিথেন অন্যতম। তাই সিটি করপোরেশনকে আমিনবাজার নিয়ে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ পরিবেশবিদদের।

পরিবেশবিদ অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘আমিনবাজার ল্যান্ডফিল স্টেশনের বর্তমান যে অবস্থা রয়েছে সেখানে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি স্পষ্ট অরাজকতা এবং ব্যর্থতার একটা চিত্র দেখতে পাই। বর্জ্যের কারণে আশপাশের পরিবেশ ও মানুষের যে ক্ষতি হচ্ছে, বায়ু দূষণ হচ্ছে এটি দেখভাল করার যে দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের ছিল সুস্পষ্টভাবে তারাও ব্যর্থ হয়েছে। পুরোটাই একটি ব্যর্থতার চিত্র। অনতিবিলম্বে এটিকে ভালো ম্যানেজম্যান্টের আওতায় আনা উচিত।’

এদিকে, নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রতিবছরই রাজধানীতে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। তাই পরিকল্পিত নগরী গড়তে হলে এখনই বৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও এগিয়ে আসার আহ্বান নগর পরিকল্পনাবিদদের।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘এত বড় একটা ক্যাপিটাল সিটিতে আমরা যখন বসবাস করি তার অবশ্যই একটা বিজ্ঞানভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত। যার আংশিক একটা বিষয় এখানে আছে। শুধু সংগ্রহ করে এবং পরিবহন করে। কিন্তু সর্টিং, রিসাইক্লিং এবং ডিসপোজাল এটার কোনোটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। এটা হচ্ছে আমাদের সবথেকে বড় সমস্যা।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০০৯ সালে আমিনবাজারে ৫৪ দশমিক ৮৮ একর জমিতে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালে এখানে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণার কথা ছিল। তবে এখনো সেখানে বর্জ্য ফেলছে ঢাকা উত্তর সিটি।

এএইচ