বিপিএলে আসছে ২৫ লাখ টাকার ট্রফি, কী আছে এতে?

হীরা ও স্বর্ণের কারুকাজে সাজানো এই ট্রফিতে যা থাকছে
ক্রিকেট
এখন মাঠে
0

বিপিএলের (BPL 2026) ১২তম আসরের দামামা বেজে উঠলেও এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সাক্ষী হলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেলেও এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি বিপিএলের অফিশিয়াল ট্রফি। ফলে অধিনায়ক ও ট্রফির প্রথাগত ফটোসেশন ছাড়াই শুরু হয়েছে মাঠের লড়াই। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (BCB) জানিয়েছে, এবার সাধারণ কোনো ট্রফি নয়, বরং হীরাখচিত এক রাজকীয় ট্রফি (Diamond-Encrusted Trophy) আসছে দুবাই থেকে।

বিপিএল ২০২৬: হীরাখচিত ট্রফির মূল আকর্ষণ

  • মূল্য: ২৫,০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা)।
  • প্রধান উপাদান: উচ্চমানের স্টার্লিং সিলভার এবং তার ওপর ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের প্রলেপ (Gold Plating)।
  • পাথরের কারুকাজ: ট্রফির লোগো ও কাঠামোতে বসানো হয়েছে কয়েকশ ক্ষুদ্র কাট ডায়মন্ড (হীরা), যা কৃত্রিম আলোতে উজ্জ্বল প্রতিফলন তৈরি করবে।
  • নির্মাণকারী দেশ: সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই)। আইপিএল ও পিএসএলের ট্রফি তৈরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন:

বিপিএল ট্রফি ডিজাইন |ছবি: এখন টিভি

ট্রফি নিয়ে কেন এত গোপনীয়তা ও খরচ? (Why the Luxury Trophy)

বিসিবি সূত্র জানিয়েছে, দুবাইয়ের একটি নামী প্রতিষ্ঠানের তৈরি এই বিশেষ ট্রফিটির বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫ লাখ টাকারও বেশি। বিসিবির সহ-সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন জানান:

কারণ: আগের ট্রফিগুলো ছিল গতানুগতিক, যা বিসিবির নতুন মানের সাথে মানানসই নয়।

বিশেষত্ব: এবারের ট্রফিটি হবে হীরাখচিত বা 'ডায়মন্ড স্টাডেড' (Diamond Studded Trophy), যা বিপিএলের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি।

আগমন: টুর্নামেন্টের মাঝপথে যেকোনো সময় ট্রফিটি দেশে পৌঁছাবে এবং তখন জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটি উন্মোচন করা হবে।

আরও পড়ুন:

বিপিএল লোগো |ছবি : সংগৃহীত

২০২৬ বিপিএলের ট্রফিতে যা থাকছে

টুর্নামেন্টের মাঠের লড়াই শুরু হলেও ট্রফিটি নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে চলছে ব্যাপক জল্পনা। সাধারণ কোনো মেটাল নয়, বরং হীরা ও মূল্যবান ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরি এই ট্রফিটি হবে বিপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রফি।

কী আছে এই হীরাখচিত ট্রফিতে? (What’s Inside the Diamond Trophy)

বিসিবি (BCB) এবং দুবাইয়ের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ট্রফিটি অন্য সব ট্রফি থেকে আলাদা হওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ:

মূল্যবান পাথর: ট্রফিটির লোগো এবং মূল কাঠামোতে কয়েকশ ক্ষুদ্র 'কাট ডায়মন্ড' বা হীরা বসানো হয়েছে। কৃত্রিম আলোর নিচে যা বিচ্ছুরণ তৈরি করবে।

উপাদান: ট্রফিটির মূল বডি তৈরি হয়েছে উচ্চমানের স্টার্লিং সিলভার দিয়ে, যার ওপর দেওয়া হয়েছে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের প্লেটিং (Gold Plating)।

ডিজাইন: ট্রফিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বা ক্রিকেটের কোনো বিশেষ ঐতিহ্যের ছাপ খোদাই করা থাকতে পারে। এর ওজনও গতানুগতিক ট্রফির চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে।

মূল্য: বিসিবি জানিয়েছে, এর নির্মাণ ও পরিবহন খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় ২৫ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

আরও পড়ুন:

বিপিএল ২০২৫: সিলেটে মাত্র ২০০ টাকায় মাঠের লড়াই, টিকিট মিলবে শুধুই অনলাইনে! |ছবি : সংগৃহীত

কেন দুবাই থেকে আনা হচ্ছে? (Why Imported from Dubai)

বিসিবির সহ-সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেনের মতে, আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ট্রফির গুরুত্ব অপরিসীম। দুবাইয়ের যে প্রতিষ্ঠানটি এই ট্রফি বানাচ্ছে, তারা আইপিএল (IPL) বা পিএসএলের (PSL) মতো বড় টুর্নামেন্টের ট্রফি তৈরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বিপিএলকে বৈশ্বিক বাজারে আকর্ষণীয় করতে এবং বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতেই এই বিলাসবহুল উদ্যোগ।

আরও পড়ুন:


ট্রফি উন্মোচন ও অধিনায়কদের ফটোসেশন (Trophy Unveiling & Photoshoot)

ট্রফিটি বর্তমানে দুবাই থেকে ঢাকার পথে রয়েছে। বিসিবি পরিকল্পনা করছে: ১. ট্রফিটি দেশে পৌঁছানোর পর ঢাকার কোনো ঐতিহাসিক স্থানে (যেমন: আহসান মঞ্জিল বা সংসদ ভবন এলাকা) সাত দলের অধিনায়কদের নিয়ে একটি জমকালো ফটোসেশন করা হবে। ২. টুর্নামেন্টের মাঝপথে একটি গালা ইভেন্টের মাধ্যমে এটি জনসাধারণের সামনে আনা হবে।

সিলেটে বিপিএলের শুরু ও অব্যবস্থাপনা (BPL Kick-off in Sylhet)

নিরাপত্তা শঙ্কায় ঢাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পর সিলেটে ১৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত আয়োজনের মাধ্যমে বিপিএলের পর্দা ওঠে। তবে মাঠের আয়োজনে কর্মকর্তাদের আধিক্যের কারণে দর্শকদের গ্যালারি থেকে অনুষ্ঠান দেখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

মাঠের লড়াই অবশ্য শুরুতেই জমে উঠেছে। প্রথম ম্যাচে সিলেট টাইটানসকে ১৯১ রানের টার্গেট দিয়েও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স (Rajshahi Warriors)। নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য সেঞ্চুরি এই জয়কে আরও স্মরণীয় করে তুলেছে।

আরও পড়ুন:

বিপিএল ২০২৫ |ছবি: এখন টিভি

বিপিএল ইতিহাসের সব আসরের ট্রফির বিবর্তন ও তুলনা

বিপিএলের গত ১১টি আসরে ট্রফির ডিজাইনে অনেকবার পরিবর্তন এসেছে। কখনও ট্রফি হয়েছে সাধারণ মেটালের, কখনও বা তাতে ছিল ঐতিহ্যের ছোঁয়া। ২০২৬ সালের ২৫ লাখ টাকার হীরাখচিত ট্রফির আগে বিপিএলের ইতিহাসে কোন ট্রফিগুলো সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে, তার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো:

বিপিএল ইতিহাসের সকল আসরের ট্রফির তুলনা

আসর (Year)ট্রফির ধরন ও ডিজাইনকেন এটি অনন্য বা সুন্দর ছিল?
বিপিএল ২০২৬ (১২তম আসর)রাজকীয় ও হীরাখচিতবিপিএল ইতিহাসের প্রথম হীরাখচিত (Diamond-Encrusted) ট্রফি। ১৮ ক্যারেট সোনা ও হীরা দিয়ে দুবাইয়ে তৈরি এই ট্রফিটির মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
বিপিএল ২০২৪-২৫ (১০ম ও ১১তম আসর)আধুনিক ও শৈল্পিকসিলভার ও গোল্ডেন শেডের নিখুঁত কাজ। এর জালি কাটা ডিজাইন এবং কার্জন হলের ফটোসেশন একে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
বিপিএল ২০২৩ (৯ম আসর)স্লিম ও মেটালিকএই ট্রফিটি ছিল কিছুটা ছিমছাম। খুব বেশি কারুকাজ না থাকলেও এর গ্লসি সিলভার ফিনিশিং আধুনিক লুক দিয়েছিল।
বিপিএল ২০২২ (৮ম আসর)মিনিমালিস্টিক"এই আসরের ট্রফিটি ছিল সরু এবং লম্বাটে। এর ডিজাইন খুব বেশি জমকালো ছিল না, তবে ছিমছাম ডিজাইনের কারণে এটি অনেকের পছন্দ ছিল।"
বিপিএল ২০২০ (বঙ্গবন্ধু বিপিএল)ঐতিহাসিক স্মারক"এটি ছিল একটি বিশেষ সংস্করণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এর বডিতে বিশেষ খোদাই করা লোগো ছিল, যা একে আবেগীয়ভাবে সেরা করেছিল।"
বিপিএল ২০১৭-১৯ (৫ম ও ৬ষ্ঠ আসর)ঐতিহ্যবাহী মেটালউজ্জ্বল সোনালি রঙের ভারি ট্রফি। এর দুই পাশের ডানা সদৃশ বড় হাতল একে আভিজাত্য দিয়েছিল। মাশরাফি-সাকিবের ট্রফি জয়ের সেই ছবিগুলো ছিল আইকনিক।
বিপিএল ২০১৬ (৪র্থ আসর)সোনালি কাপএই আসরেই প্রথম পুরো গোল্ডেন টাচ আনা হয়। ট্রফিটি বেশ চওড়া ছিল এবং এর কারুকাজ ছিল বেশ আকর্ষণীয়।
বিপিএল ২০১৫ (৩য় আসর)সিলভার ক্লাসিকএটি ছিল লম্বাটে এবং পুরোটাই রুপালি রঙের। নকশায় কিছুটা আধুনিকতা এলেও এটি ছিল সাধারণ মেটালিক ডিজাইনের।
বিপিএল ২০১৩ (২য় আসর)ক্লাসিক ক্রিকেট ট্রফিঅনেকটা আইসিসি ট্রফির মতো দেখতে। সিলভার ও গোল্ডেন শেডের সংমিশ্রণে তৈরি এই ট্রফিটি দেখতে খুব সিম্পল কিন্তু এলিগ্যান্ট ছিল।
বিপিএল ২০১২ (১ম আসর)বেসিক ডিজাইন"বিপিএলের প্রথম ট্রফিটি ছিল অনেকটা ঘরোয়া লিগের কাপের মতো। ছোট আকারের এই ট্রফিতে খুব বেশি কারুকাজ ছিল না, তবে এর ঐতিহাসিক মূল্য অনেক।"

বিপিএল ২০২৬ |ছবি : সংগৃহীত

আরও পড়ুন:

বিপিএল ইতিহাসের সফলতম ৫ জন ক্রিকেটার

পরিসংখ্যান এবং প্রভাবের বিচারে বিপিএলের সেরা ৫ ক্রিকেটার হলেন:

সাকিব আল হাসান: বিপিএলের অবিসংবাদিত রাজা। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক এবং রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ওপরের দিকে। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তার ধারেকাছে কেউ নেই।

তামিম ইকবাল: বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। একাধিক সেঞ্চুরি এবং ধারাবাহিক ব্যাটিং দিয়ে তিনি বিপিএলের ব্যাটিং স্তম্ভ।

মাশরাফি বিন মর্তুজা: বোলার হিসেবে যেমন সফল, তার চেয়েও বড় তার অধিনায়কত্ব। তবে উইকেট শিকারি হিসেবেও তিনি বিপিএলের শীর্ষ তালিকায় রয়েছেন।

মুশফিকুর রহিম: বিপিএলের অন্যতম ধারাবাহিক রান সংগ্রাহক। উইকেটকিপিং এবং চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে তিনি অনন্য।

মোস্তাফিজুর রহমান: বিপিএল ইতিহাসের অন্যতম সফল বোলার। তার কাটার এবং ডেথ ওভার বোলিং অনেক আসরে কুমিল্লা ও অন্যান্য দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে ভূমিকা রেখেছে।

আরও পড়ুন:

বিপিএল ইতিহাসের সেরা ৫ অধিনায়কের সফলতার পরিসংখ্যান

অধিনায়ক হিসেবে বিপিএল জেতা এবং ম্যাচ জয়ের হারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি প্রতিবেদন:

অধিনায়কের নামশিরোপা সংখ্যাবিশেষ সাফল্য
মাশরাফি বিন মর্তুজা৪টি"৩টি ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে (ঢাকা, কুমিল্লা, রংপুর) ৪টি শিরোপা জিতেছেন। তাকে বিপিএলের সফলতম নেতা মানা হয়।"
ইমরুল কায়েস৩টিকুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে হ্যাটট্রিক শিরোপা (সব মিলিয়ে ৩টি) জেতানোর রেকর্ড। অধিনায়ক হিসেবে জয়ের হার অত্যন্ত বেশি।
সাকিব আল হাসান২টিঢাকা ডায়নামাইটস ও ফরচুন বরিশালের হয়ে সফল অধিনায়কত্ব করেছেন। ২বার শিরোপা জিতেছেন।
লিটন দাস১টিগত আসরে (২০২৪) ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতিয়েছেন।
আন্দ্রে রাসেল১টি২০১৯ সালে রাজশাহী রয়্যালসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।

আরও পড়ুন:

এসআর