মাছ চাষে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য-পরিবেশ ও খাদ্যনিরাপত্তা

নড়াইলে মাছ চাষ
এখন জনপদে , মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
কৃষি
0

নড়াইলে মাছ চাষে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই মাছের রোগ প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধিতে বিভিন্ন মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে তাৎক্ষণিক সুফল মিললেও দীর্ঘমেয়াদে বাড়ছে ঝুঁকি। মাছ চাষে অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহারে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্যনিরাপত্তা। বিশেষজ্ঞদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার শাস্তিযোগ্য হলেও মৎস্যখাতে নেই এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা।

মাছ চাষে সম্ভাবনাময় জেলা নড়াইল। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠায় কৃষি ও মৎস্যখাতই এ জনপদের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। জেলায় কয়েক হাজার ঘের ও জলাশয় মিলিয়ে ৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে মাছ চাষ করা হয়। এ খাতে জড়িত ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদনে জড়িতরা রোগ প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে মৎস্যখামারিদের সঠিক পরামর্শ দেয়ার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান না থাকায় স্থানীয় দোকানদের শরণাপন্ন হতে হয়। এতে বিভিন্ন সময়ে ভালো ফল পেতে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সাময়িক সুফল মিললেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। যা অনেকেরই অজানা।

মাছ চাষিরা জানান, অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। কোম্পানির লোকেরা তাদের যা পরামর্শ দেয় সেই ওষুধ তারা ব্যবহার করে।

অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে মাছের দেহে থাকা ওষুধের অবশিষ্টাংশ ভোক্তার শরীরে প্রবেশ করে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহারে জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও ব্যবহার শাস্তিযোগ্য হলেও মৎস্যখাতে নেই এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা। তাই এ সংক্রান্ত নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি।

আড়ও পড়ুন:

নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তিৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি বাজার যেন তদারকি করা হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক যেন বিক্রয় না করে সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রক্রিয়াধীন। কাজ শেষ হলে চাষিরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মাছ চাষে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সে পর্যন্ত ওষুধ ব্যবহারে চাষিদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

নড়াইল সিভিল সার্জন মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানবদেহে কিছু ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। এগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি করে। মাছের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে মানুষদের এলার্জি, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, হাঁচি, কাশি, হাঁপানি এ ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।’

নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের একটি নীতিমালা তৈরির প্রসেস চলছে। এখন কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা চাষিদের নিরুৎসাহিত করে থাকি।’

নড়াইলে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টন বিভিন্ন জাতের মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য ৭শ’ কোটি টাকার বেশি।

এফএস