তিনি বলেন, ‘আইসিইউতে ছিলেন, সেখান থেকে কেবিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছিল। কিন্তু (বুধবার) সকাল থেকে শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’
ইউনির্ভাসেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ফরিদা পারভীনকে ভেন্টিলেটর মেশিনে দেয়া হয়েছে, যেটাকে সাধারণত লাইফ সাপোর্ট বলা হয়৷ উনি নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছেন না। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। ব্লাড প্রেসার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনটা ওষুধ দেয়ার পরও পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কতক্ষণ চলবে তা বলা যাচ্ছে না। যদি উনার ব্লাড প্রেসার বাড়ে তাহলে হয়ত আশা করা যাবে। আর না বাড়লে হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেটাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। তখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
৭১ বছর বয়সী ফরিদা পারভীনের অসুস্থতা দীর্ঘদিনের। কিডনি সমস্যা ও ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে তার। কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে নিয়মিত।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ১৩ দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফেরেন। এরপর ৫ জুলাই তাকে হাসাপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। টানা দুই সপ্তাহ তখন হাসপাতালে ছিলেন।
চিকিৎসকের বেঁধে দেয়া নিয়মের বেড়াজালেই দিন কাটছিল তার। এর মধ্যে খবর আসে গত ২ সেপ্টেম্বর আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছেন এই শিল্পী।
জুলাইয়ে ফরিদা পারভীনকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মেডিকেল বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ফরিদা পারভীনের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন।
নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সংগীত জীবন শুরু করলেও পরে তিনি ভিড়ে যান লালনের গানে। এরপর জীবনভর লালনগীতি চর্চাতেই ডুবে থেকেছেন এই শিল্পী।
সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান তিনি।
বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন এ শিল্পী। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।
ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে লালনের গানের যে চর্চা হয়ে এসেছে গেল পাঁচ দশক ধরে, সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে প্রায় ১৬ বছর আগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘অচিন পাখি সংগীত একাডেমি’। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা, প্রতিষ্ঠানের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া এবং নিজস্ব ভবন না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটিও টিকে থাকার লড়াইয়ে।