বাঁশির সাথে আবুল কাশেমের সখ্যতা বহু দিনের। ৯ বছর বয়স থেকেই বাবা-মায়ের সাথে বাঁশি তৈরির কাজ শুরু। অবসরে সেই বাঁশিতেই আনমনা সুর তুলতেন। পরে গানকে সঙ্গী করে পার করেছেন জীবনের ৫০টি বছর। এখন তার নিপুণ হাতে তৈরি বাঁশি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও।
আবুল কাশেমকে অনুসরণ করে গ্রামীণ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রামের ৭০টিরও বেশি পরিবার। যাদের জীবন-জীবিকা এ হস্তশিল্পের উপরই নির্ভরশীল। বছর জুড়ে কর্মব্যস্ততা থাকলেও বৈশাখের আগমনকে ঘিরে দম ফেলার ফুরসত নেই বাঁশির কারিগরদের। তৈরি হচ্ছে মোহন, মুখ, আড়, নাগিনসহ ১৪ থেকে ১৫ জাতের বাঁশি।
কারিগররা বলছেন, বৈশাখকে ঘিরে বাঁশি কিনতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা। বহির্বিশ্বে তাদের বাঁশির বেশি চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত ধরে যাচ্ছে ফ্রান্স, জার্মান, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ যুক্তরাষ্ট্র্র ও যুক্তরাজ্যের ২৭টি দেশে।
বাঁশির গ্রাম নামে পরিচিত শ্রীমদ্দিতে এক সময় অন্তত শতাধিক হিন্দু-মুসলিম পরিবার বাঁশি তৈরি করতেন। বর্তমানে বাঁশের মূল বৃদ্ধি, পুঁজি সংকট এবং ঋণগ্রস্ত হয়ে শিল্পটি ছেড়েছেন ৩০টির বেশি পরিবার। বাঁশির গুণগত মান বাড়িয়ে রপ্তানি করতে ঋণ সুবিধাসহ সরকারি সহযোগিতা চান কারিগররা। আর ঐতিহ্যের এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রায় দুইশো বছর ধরে কুমিল্লার শ্রীমদ্দির বাঁশি দেশের তিনভাগের দুইভাগ চাহিদা পূরণ করছে। এখানকার বাঁশি মানে ভালো হলেও দামে তুলনামূলক সস্তা।