সুন্দরবনের নদীপথে পুশ ইন: ৭৫ বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর, তিনজন আদালতে

সাতক্ষীরা
সুন্দরবনের নদীপথে ফেলে যাওয়া ৭৮ জন
এখন জনপদে
0

ভারতের গুজরাট থেকে তুলে এনে সুন্দরবনের নদীপথে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জন্মসূত্রে ভারতীয় বলে দাবি করা বাকি তিনজনকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। আজ (মঙ্গলবার, ১৩ মে) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের আয়োজনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও নৌবাহিনী ৭৮ জনকে অবৈধভাবে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকার এক চরে ছেড়ে যায়।

পরে বনবিভাগের সহায়তায় কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। বাকি তিনজন নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করেছেন, যাদের কাছে কোনো বৈধ ভারতীয় পরিচয়পত্র নেই।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভারতীয় দাবি করা তিনজনের পরিবার মূলত বাংলাদেশি হলেও তারা ভারতের গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার আব্দুর রহমান (২০), নড়াইলের মো. হাসান শাহ (২৪) ও সাইফুল শেখ (১৯)। তিনজনকেই শ্যামনগর থানায় মামলা দিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের বিষয়ে তদন্ত করে যদি প্রমাণ মেলে যে তারা বাংলাদেশি, তাহলে যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, তারা গুজরাটের আহমেদাবাদ ও সুরাট শহরের বিভিন্ন বস্তিতে বসবাস করতেন এবং খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন। গত ২৬ এপ্রিল ভারতীয় প্রশাসন তাদের বস্তিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ক্যাম্পে কয়েকদিন আটকে রেখে হাত-পা ও চোখ বেঁধে বিমান ও জাহাজে করে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে আসা হয়।

তারা আরও জানান, এ সময় তাদের খাবার দেওয়া হয়নি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং ধর্মীয় অবমাননাসূচক আচরণ করা হয়েছে। এমনকি এখনো তারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

উদ্ধারকৃত ৭৫ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭ জনের বাড়ি নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া খুলনা জেলার ৬ জন, যশোর জেলার ২ জন, এবং সাতক্ষীরা, ঢাকা ও বরিশাল জেলার একজন করে আছেন।

এদের মধ্যে ৭০ জন আহমেদাবাদের বস্তিতে এবং ৮ জন সুরাটে অবস্থান করতেন বলে জানা গেছে। শ্যামনগর থানায় কোস্টগার্ডের প্রেস ব্রিফিং শেষে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে ৭৫ জনকে তাদের স্বজনদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়।

এএইচ