৫৮০ মিটার সেতুর কাজ শেষ হয়নি সাত বছরেও

ফরিদপুরে পদ্মার শাখা নদীতে সাত বছরেও শেষ হয়নি  ৫৮০ মিটারের সেতুর নির্মাণ
এখন জনপদে
0

ফরিদপুরে পদ্মার শাখা নদীতে সাত বছরেও শেষ হয়নি ৫৮০ মিটারের একটি সেতুর নির্মাণ। কাজ শেষ হতে আরো দু’বছর লাগবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে, তাদের মেয়াদ চলতি বছরের জুনেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী। এদিকে, সেতু নির্মাণে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। দ্রুত সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার দাবি তাদের।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। জান্নাত কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার আবু হানিফ বলেন, ‘যেসব কাজ বাকি আছে, তা শেষ করতে কমপক্ষে আরো দুই বছর সময় লাগবে।’

পদ্মার এই শাখা নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রিজের ধীরগতিতে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের ক্ষোভ এ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা আর সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের আগ্রহ কম থাকায় দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিস মাতুব্বর, ঈদ্রিস বেপারি, আবজাল হোসেন, মিরাজ হোসেনসহ আরো বেশ কয়েকজন জানালেন, সেতুর কাজ বছরের পর বছর ঝুলে থাকায় তৈরি হয়েছে ভোগান্তি। ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত নৌকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে দুই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বিশেষ করে শিশু, শিক্ষার্থী, রোগী ও কৃষকদের জন্য যোগাযোগ এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাদের অভিযোগ, ঠিকাদার পরিবর্তন, দুর্নীতি আর দপ্তরের উদাসীনতায় এ দুর্দশা দীর্ঘায়িত হয়েছে।

স্থানীয় ডিগ্রীরচর ইউনিয়নের কৃষক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘চরাঞ্চলে নদী পারাপার ছাড়া কোনও স্থায়ী সড়ক নেই। বর্ষাকালে নদী গর্জে ওঠায় ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া এক নিত্য সমস্যা। ঝড়বৃষ্টিতে নৌপথে চলাচল করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ফলে জরুরি চিকিৎসার জন্য সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর সদরে যাওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানোও অত্যন্ত কষ্টকর। ব্রিজ নির্মাণ দেখে আমরা চরের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেটি আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে।’

ডিগ্রিচর ইউনিয়নের চেয়ারম মেহেদী হাসান মিন্টু বলেন, ‘চরের কৃষক ফসল ঠিকই ফলায়, কিন্তু নদী পার করতে না পারায় শহরের বাজারে নিতে পারে না তারা । এজন্য লোকসান হয়। ব্রিজটির নির্মাণ শেষ করা জরুরি।’

এলজিইডির ফরিদপুর সদর উপজেলার প্রকৌশলী দেবাশীষ বাকচী বলেন, ‘বর্তমানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদীতে পানি বাড়ছে , সময়মতো কাজ শেষ করা কঠিন হবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার ভাজনডাঙ্গা ঘাট আরএইচডি হতে গেন্দুমোল্লা হাট জিসি সড়ক ২০৮ মিটার চেইনেজে পদ্মা শাখা নদীর উপর ৫৫০ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ সংশোধিত দৈর্ঘ্য ৫৮০ মিটারের কাজ।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর শহরের সঙ্গে দুর্গম চরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতেই পদ্মার শাখা নদীর উপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রায় ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। তবে সেসময়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাফিয়া কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলায় অন্যতম আসামি রুবেল-বরকত নানান দুর্নীতির অভিযোগে মামলার আসামি হলে ২০২০ সালে তারা পালিয়ে যায়। থেমে যায় সেতুর কাজ।

২০২২ সালে আবার নতুনভাবে সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কিন্তু ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে এখনো প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।

পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের এই সেতুকে ঘিরে জীবনমান ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে। তবে নির্মাণকাজের ধীরগতি সে স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা।

ইএ