উপজেলা ঘোষণার পর কেটে গেছে ৪ বছর। এই ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যক্রম। দপ্তরগুলোর মধ্যে মাত্র ৬টি দপ্তরের কার্যক্রম চলমান থাকার কথা ইউএনও জানালেও ভবনের কক্ষগুলো অধিকাংশই তালাবদ্ধ। নামফলক টাঙানো থাকলেও নেই কর্মকর্তার নাম। ডেস্ক থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৫ জন কর্মচারীর কাজ চলছে মাত্র ৪ জন দিয়ে। এতে ভোগান্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অফিস সহকারী মাঈনুল ইসলাম জানান, অফিস সহকারী লেভেলে আমাদের থাকার কথা ৮ জন। আমরা আছি ৩ জন। ৩ জনেই আমরা কাজ করছি। আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর থাকার কথা ছিল ৭ জন, তারা আছেন ১ জন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রমেন মধু জানান, ডাসার উপজেলা সম্পূর্ণ কৃষিভিত্তিক। সেক্ষেত্রে একজন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যদি থাকতো তাহলে বোর্ডের বরাদ্দগুলো আসতো, সেক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রমও গতিময় হতো।
শফিক আল মামুন। ডাসার উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। জমি-সংক্রান্ত জটিলতায় এসেছিলেন উপজেলায়। কিন্তু উপজেলা ভূমি অফিস না থাকায় সেই সেবা না পেয়েই ফিরতে হয়েছে তাকে। দোকানে বসে কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে আবারো যাত্রা সেই পুরোনো উপজেলা কালকিনিতে।
শফিক আল মামুন জানান, দুর্ভোগ রয়েই গেছে। যদিও উপজেলা হয়েছে তবে এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নেই। এগুলো জনগণের জন্য ভোগান্তির কারণ।
মামুনের মতো সরকারের নানামুখী সেবা থেকে বঞ্চিত ডাসারবাসী। প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা ঘোষণায় এক সময় যারা খুশি হয়েছিল, তারা এখন ক্ষুব্ধ। বছরের পর বছর কেটে গেলেও উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নির্মাণ হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কৃষি, ফায়ার সার্ভিস, প্রাণী সম্পদ ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর না থাকায় অন্য উপজেলায় গিয়ে সেবা নিতে গিয়ে নানান বিড়ম্বনা আর ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ উপজেলাবাসী।
উপজেলাবাসী বলেন, আমাদের আশপাশে কোনো হাসপাতাল নেই। অন্য উপজেলায় হলে তো আমাদের কোনো লাভ নেই। আমাদের অনেক সময়, টাকা, পরিশ্রম যায়। আমাদের উপজেলায় একটা ব্যাংকিং সুবিধা ও নেই। প্রায় ৪ বছর হয়ে গেলেও আমাদের উপজেলআ কার্যক্রম এখনো শুরুই হয়নি।
শুধু উপজেলাবাসীর নয় ভোগান্তিতে কর্মকর্তার-কর্মচারীরাও। বিষয়টি স্বীকার করে সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ-উল-আরেফিন বলেন, ‘এটা মাত্রই শুরু হয়েছে। সব কিছু চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সব সীমাবদ্ধতা দূর করে নাগরিক সেবা চালু করার। এজন্য একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী কার্যক্রমও চলছে।’
উপজেলার নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণ আর দপ্তরগুলোর কার্যক্রম শুরু করা গেলে অর্থনৈতিক জরিপে দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম এই উপজেলাবাসীর সরকারি সেবাগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব বলছেন সংশ্লিষ্টরা।