বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনের ভূমির অপব্যবহার বা ধ্বংস দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে সে নির্দেশনা মানছেন না বরগুনার প্রভাবশালীরা।
বিষখালী নদীর মাঝে জেগে ওঠা স্নিগ্ধ দ্বীপবনে ভেকু ব্যবহার করে মাটি কাটার দৃশ্য ধরা পড়ে এখন টেলিভিশনের ক্যামেরায়। গণমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়েই বন্ধ করা হয় ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য মাটি কাটার কাজ। মুঠোফোনে খবর প্রচার না করার অনুরোধ জানায় চক্রের মূল হোতা বশির পঞ্চায়েত।
বরগুনা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বশির পঞ্চায়েত বলেন, ‘আমি সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব। টেন্ডারে আমরা ১২ জন আছি। আপনি আসেন সাক্ষাতে কথা বলি।’
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আনি নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরি। উনারা এসে জালের ওপর দিয়ে যায়। এত করে বলি যে ভাই, পনারা ওইদিক দিয়ে ঘুরে যান। কোনো কথা শোনে না। বলে মাটি কাটতে আসছি। আমি বলি, মাটি কাটতে বলছে কে আপনাদের? বলে আমরা বন বিভাগ থেকে কিনেছি।’
বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে তড়িঘড়ি সেখানে উপস্থিত হন নির্বাহী ম্যাজিট্রেট। তাৎক্ষনিক জব্দ করা হয় একটি বার্জ, একটি সমুদ্রগামী ট্রলার ও একটি মাটি কাটার এক্সক্যাভেটর।
বন বিভাগের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও মাটিকাটার সময়ে দেখা মেলেনি বরগুনার বন রক্ষকদের। এতে ক্ষুব্ধ পরিবেশবাদীরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বন কর্মকর্তাকে পাওয়া গেলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
বরগুনা পরিবেশ আইনবিদ সমিতির সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘মূল দায়িত্ব হলো বন বিভাগের। এটা তাদের দায়িত্ব, এটা তাদের করা উচিত। কিন্তু তারা এটা করতে চায় না। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আছে, কিন্তু কেউ মানতে চায় না। এ আইনগুলো যদি মানতো, তাহলে আমাদের এই অঞ্চলে সংরক্ষিত বনগুলো ধ্বংস হতো না। এটার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
পটুয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জানি না, আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি, আমি জানি না। আমি জানবো তারপর আপনাদের তথ্য দিতে পারবো।’
তবে মাটিকে কেটে অবৈধ বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘যখনই এ ধরনের কোনো তথ্য পাবো। মোবাইল কোর্ট চলবে এবং আমাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট এসবের বিরুদ্ধে হচ্ছে। আপনারা যখনই তথ্য দিচ্ছেন তখনই অভিযান পরিচালনা করছি। এছাড়া যখনই আমাদের নজরে আসছে তখনই আমরা করছি।’
বরগুনায় চার হাজার ১৮৩ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে যা রক্ষা করে উপকূলবাসীকে।