ফেনীতে বন্যায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি; সমাধানের আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ প্রশাসন

খামার থেকে বন্যার সরাচ্ছেন খামারিরা
এখন জনপদে
0

ফেনীতে এবারের বন্যায় মৎস্য আর প্রাণিসম্পদের ৯ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল, ১২২টি সড়ক ও ২ শতাধিক ঘরবাড়ির। প্রাণ গেছে একজনের। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ শ’ কোটি টাকার বেশি। বর্ষা এলেই জেলার উত্তরের তিন উপজেলার এই চিত্র যেন অনিবার্য। সরকারি কর্তারা বারবার আশ্বাস দিলেও মেলে না সমাধান।

যতদূর চোখ যায় সবই ডুবেছিলো বানের জলে। এখনো জলাবদ্ধ কিছু এলাকা। তবে, বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় অবস্থার অনেকটা উন্নতি হলেও ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন।

পরশুরামের পশ্চিম অলকার এলাকাবাসীর সঙ্গে নদীর বাঁধ রক্ষার কাজে যান মাসুম ও মাহফুজ। তবে বাঁধ মেরামতে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে দেখেন প্রবল স্রোতে ঘরে আটকে আছেন তাঁদের মা, মাসুমের স্ত্রী ও একমাত্র এক মাস বয়সী শিশু সন্তান।

তারা জানায়, নদীর বাঁধের কাজ থেকে ফিরে দেখেন তাদের পরিবার প্রবল স্রোতে ঘরে আটকে আছেন। এরপর তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বন্যার পানিতে ঘরের আসবাব, খাবার, প্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে।

গত সপ্তাহে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি স্থান ভেঙে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে প্রাথমিক ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু হয়। সরকারি হিসেবে জেলায় ২ হাজার ৩শ' পুকুরের অন্তত ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে ৭ হাজার হেক্টর ফসলী জমি।

এলাকাবাসী জানান, বন্যার পানিতে মাছ ভেসে গেছে সব। গরুর খামারও তলিয়ে গেছে। অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে খামারিদের।

এছাড়া মুরগি, গরু, ছাগল ও মহিষ মারা গিয়ে সম্পদহানী হয়েছে ৬৪ লাখ টাকার। তবে, বেশি ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের। সড়ক ও জনপদের ক্ষতিগ্রস্ত ২০কিলোমিটারের মেরামত ব্যয় দাঁড়াবে ৯০ কোটির বেশি। ঘরবাড়ির ক্ষতি টাকার অংকে যা এখনো নিরূপণ হয়নি।

ফেনী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গোখাদ্য নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কিছু গরু ও মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। কিছু মুরগি মারা গেছে, গরু মারা গেছে। খামারের অবকাঠামো কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. জগলুল হায়দার বলেন, ৫৬২৬ হেক্টরের ভেতরে ৮৫৫ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সোনাগাজীর পানি নামার পর বুঝা যাবে আমাদের কতটুক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি চূড়ান্তকরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এবারের বন্যায় ৯ হাজারের বেশি মানুষ জেলার দেড় শ’র বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। এরমধ্যে অন্তত ৬ হাজার মানুষ বাড়ি ফিরেছেন।

স্বেচ্ছাসেবকরা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো আমরা আপাতত দেব। পরবর্তীতে আমাদের মেডিকেল ক্যাম্প, ডেন্টাল ক্যাম্প, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এ ধরনের কর্মসূচি রয়েছে।

প্রতি বছর বর্ষা এলেই ডুবতে হচ্ছে ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক বাসিন্দাকে। ২০১৭ থেকে ২০২৫। এসময়ে শুধু মেরামতেই ব্যয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রতি বছর সরকারের কোটি টাকা গচ্ছা দিয়েও মিলছেনা সুফল। বাঁধ মেরামতের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠিকাদার, প্রভাবশালী মহলের কারসাজি থেকে মুক্তি চান স্থানীয়রা।

ইএ